দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ সুরক্ষায় বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। ‘সেন্টমার্টিন: পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতি’ শীর্ষক এই কর্মসূচি দ্বীপের পরিবেশ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করবে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সোলায়মান হায়দার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এমন উদ্যোগে এগিয়ে এলে সেন্ট মার্টিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।

প্রধান লক্ষ্য ও উদ্যোগ

এই কর্মসূচির মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় নেওয়া হবে একাধিক উদ্যোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 

বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইক্লিং : দ্বীপে উৎপন্ন প্লাস্টিকসহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করে তা রিসাইক্লিংয়ের জন্য প্রসেসিং প্ল্যান্টে পাঠানো হবে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা : দ্বীপে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং পদ্ধতি চালু করা হবে। বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দ্বীপজুড়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালিত হবে। স্থানীয় অর্থনীতি উন্নয়ন : স্থানীয় জেলেদের সংগৃহীত সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রিটেইল চেইন শপে ‘সেন্ট মার্টিন এক্সক্লুসিভ’ নামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি : দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হবে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। এবার ইউএনডিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দ্বীপের অর্থনীতি ও পরিবেশ দুটোকেই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে।

পরিবেশ দূষণ রোধে বিচ ক্লিনিং কার্যক্রম

উদ্বোধনী দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন ছিল ‘বিচ ক্লিনিং’ কার্যক্রম। সোমবার সকাল থেকেই প্রাণ-আরএফএল এবং মাই সেন্ট মার্টিনের সহযোগিতায় স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং স্বেচ্ছাসেবকরা সৈকত পরিষ্কারের কাজে অংশ নেন।

জাহাজঘাট থেকে দ্বীপের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত সৈকতে পড়ে থাকা প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়। এই কার্যক্রমে প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণ করেন।

বিচ ক্লিনিং কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে সৈকত প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সোলায়মান হায়দার বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই ধরনের কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি।

একসঙ্গে কাজের প্রত্যাশা

ইউএনডিপির হেড অব এক্সপেরিমেন্টেশন ড. রমিজ উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণ-আরএফএল যুক্ত হওয়ায় আমাদের কাজের গতি বেড়েছে। আমরা আশা করছি, এই উদ্যোগ দ্বীপের মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হেড অব কর্পোরেট ব্র্যান্ড নুরুল আফসার, হেড অব সাসটেইনেবিলিটি সুমাইয়া তাবাস্সুম আহমেদ, ইউএনডিপির ডেটা অ্যানালিটিকস কর্মকর্তা আহমেদ উল্লাহ কবিরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই উদ্যোগ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ সুরক্ষায় এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সচেতনতা এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

সাইদুল ইসলাম ফরহাদ/আরকে