পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় হল থেকে বের করে দেওয়ায় রংপুরের পীরগাছায় মাহফুজুর রহমান নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে অফিস সহকারী আমির আলী ও সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার পারুল ইউনিয়নের গুঞ্জরখাঁ গ্রামে মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে।

নিহত মাহফুজুর রহমান ওই গ্রামের হতদরিদ্র হাফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি উপজেলার দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুর ঘটনায় পরিবার, স্বজন, সহপাঠী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী  সূত্রে জানা যায়, ওই স্কুলের চলমান অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় মাহফুজুর রহমান পরীক্ষার ফি ছাড়াই পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। রোববার সকালেও সে গণিত বিষয়ের পরীক্ষায় ফি ছাড়াই অংশগ্রহণ করতে যায়। যথা নিয়মে মাহফুজুর রহমান সকাল ১০টায় সহপাঠীদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসময় পরীক্ষার ফি না দেওয়ার অভিযোগে মাহফুজুর রহমানকে পরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় শ্রেণি কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

পরে অফিস সহকারী আমীর হোসেন প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যান মাহফুজুর রহমানকে। সেখানে সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম  ও আব্দুল হান্নান পরীক্ষার ফি না দেওয়াসহ অষ্টম শ্রেণির নিবন্ধন না করায় মাহফুজুর রহমানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। এ অপমান সইতে না পেয়ে কোমলমতি ওই শিক্ষার্থী ওই দিন নিজ বাড়িতে এসে শোবার ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় রশি পেচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে বিষয়টি টের পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। এ ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

মাহফুজুর সহপাঠী মেহেদী হাসান কৌশিক বলেন, অভাব আর অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে লেখাপড়া করতো মাহফুজুর। স্কুল বন্ধের দিনে সে অন্যের ক্ষেতে দিন হাজিরায় কৃষি শ্রমিকের কাজ করতো। এ কারণে হয়তো সে অষ্টম শ্রেণির নিবন্ধন করতে দেরি করেছিল। গণিত পরীক্ষার দিনে স্যাররা তাকে স্কুল থেকে চলে যেতে বলেন। পরে আমরা তার মৃত্যুর খবর জানতে পাই।

এলাকার ওবায়দুল হক নামে এক ব্যক্তি বলেন, মাহফুজুর রহমান দরিদ্র পরিবারের ছেলে। স্কুলের ফি জোগাড় করার জন্য শুক্রবার ও শনিবার আলু ক্ষেতে দিন হাজিরায় শ্রমিকের কাজ করেন।

মাহফুজুর রহমানের বাবা হাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার কলিজার টুকরা বাড়িতে এসে আত্মহত্যা করে। আমি হতদরিদ্র মানুষ। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ছুটির দিনে আমার ছেলেটাও অন্যের জমিতে দিন হাজিরায় কাজ করে আমাকে সাহায্য করতো। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত শিক্ষকদের শাস্তি দাবি করছি।  

অভিযুক্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চলমান অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষায় শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানের নিবন্ধন হয়নি। এ কারণে আগামীতে তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হয়। তাকে অপমান ও অপদস্থ করার প্রশ্নেই ওঠে না। তবে পাঁচ বিষয়ের পরীক্ষায় সে কিভাবে অংশ নিল এমন প্রশ্ন করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবিএম মিজানুর রহমান সাজু বলেন, ছেলেটি রেজিস্ট্রেশন করেনি। তাকে সেটি বুঝিয়ে বলা হয়েছে। পরে সে নিজ ইচ্ছায় স্কুল থেকে চলে গেছে। তাকে কেউ অপমান অপদস্থ করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। পরে শুনি সে বাড়িতে ফিরে আত্মহত্যা করেছে। তার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত।

পীরগাছা থানা পুলিশের ওসি তদন্ত তাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও আমির আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের বাবা হাফিজুর রহমান।

ওই কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। এতে কোনো শিক্ষক জড়িত থাকলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে