হাসপাতালের কোন ধরনের কাগজপত্র নবায়ন করা নেই, নামে মাত্র চিকিৎসক একজন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অবস্থাও খুবই নাজুক। এরপরও রোগী ভর্তি নিয়ে করছেন অপারেশন। যিনি সার্জন, তিনিই অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক। এমন হাসপাতালে সিজার করে মাকে বাঁচানো গেলেও ঠেকানো যায়নি নবজাতকের মৃত্যু।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ নারায়ণপুর পূর্ব বাজারে ‘নারায়ণপুর জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.) এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।

উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের রোস্তম মোল্লা বাড়ির অটোরিকশা চালক মো. রাসেলের স্ত্রী লিমা (১৯)- এর প্রসব বেদনা হলে তাকে নিয়ে আসা হয় এ হাসপাতালে। প্রথমে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। পেটের বাচ্চা জীবিত আছে মর্মে নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বলা হয় বাচ্চা পেটেই মৃত। অভিভাবকের স্বাক্ষর জাল করে ডিগ্রি ছাড়া বিল্লাল শেখ নামে কথিত এক ডাক্তারকে দিয়ে সিজার করার পর পাওয়া যায় মৃত বাচ্চা। এরপর শুরু হয় অভিভাবকদের হৈ-চৈ কাণ্ড।

গৃহবধু লিমার শ্বাশুড়ী ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ছেলের এই প্রথম বাচ্চা। লিমার নিয়মিত চেকআপ করা হয়। হঠাৎ গত রাতে প্রসব ব্যাথা হওয়ার পর যোগাযোগ করলে হাসপাতালের নার্স শেফালি বেগম প্রথমে বাড়িতে গিয়ে ডেলিভারি করার চেষ্টা করে। না পেরে এরপর সে আমাদেরকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসে।

রাসেলের বড় বোন নুরজাহান বেগম বলেন, এই হাসপাতালে সিজার করার জন্য ভালো চিকিৎসক আছে কিনা জানতে চাইলে তারা চিকিৎসক আছে বলে জানায়। কিন্তু ডেলিভারির আগে ও পরের তাদের কার্যক্রম দেখে বুঝতে পারি পুরো হাসপাতালেই অব্যবস্থাপনা।

মৃত নবজাতকের পিতা মো. রাসেল বলেন, কোন ভাবেই বুঝতে পারিনি এই হাসপাতালের এমন পরিস্থিতি। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণেই অপচিকিৎসার শিকার হয়েছি।

নারায়ণপুর জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.) এন্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আল-আমিন এর কাছে সিজার করা চিকিৎসকের নাম ও পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তিনি কোন তথ্য দিতে পারেননি এবং হাসপাতালে ওই চিকিৎসকের কোন তথ্য সংরক্ষণ নেই। অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর বিল্লাল ভাই নামে একজন চিকিৎসকের কথা বলেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোস্তফা ইমন চৌধুরী বলেন, ভোরে এই রোগী নিয়ে আসার পর আমি নিজেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যিনি এসে সিজার করেছেন তাকে এর আগে কোন দিন দেখিনি। হাসপাতালের এমডি তাকে ফোনে ডেকে এনেছেন।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মহিব উল্লাহ সৌরভ বলেন, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর হাসপাতালের কাগজপত্র নবায়ন না করা থাকলে এখনো করার জন্য সময় আছে।

আনোয়ারুল হক/এসএমডব্লিউ