রাজবাড়ীতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ হাজার প্রান্তিক পেঁয়াজ চাষির পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের রবি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিতরণকৃত পিঁয়াজের বীজের অঙ্কুরোদ্গম সন্তোষজনক না হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে পুনরায় পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হচ্ছে।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে জেলা প্রশাসক এই বীজ বিতরণের উদ্বোধন করেন।

জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে বিভিন্ন উপজেলার প্রণোদনার পেঁয়াজের বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৭২৫ জন প্রান্তিক কৃষক। তাতে এ বছর পেঁয়াজ চাষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন তারা। রাজবাড়ী জেলা দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয়। এ বছর পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৪৪০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ।

জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর বিভিন্ন মিডিয়াতে নিউজ প্রকাশের পর পেঁয়াজের বীজের অঙ্কুরোদ্গম না হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। পরের দিন ২ ডিসেম্বর জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভা আহ্বান করেন তিনি। সভায় উপস্থিত সদস্যগণ পেঁয়াজের বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলে দ্রুত সমাধান কি হতে পারে সেটাও জানতে চান জেলা প্রশাসক।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, লালতীর কোম্পানির তাহেরপুরি বীজ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। সভায় আরও জানানো হয়, এই বীজের গুণগত মান ভালো। এদিকে পেঁয়াজের বীজ অঙ্কুরোদ্গম না হওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসক বিএডিসির চেয়ারম্যান ও কৃষি বিভাগের সচিবকে জানালে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমি ৩ ডিসেম্বর একটি পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করি। কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সেই দিনই সচিব স্যার বরাবর এ বিষয়ে পত্র প্রেরণ করি। সেই পত্রের প্রেক্ষিতে সচিব মহোদয় এবং উপদেষ্টা মহোদয় ৪ তারিখ বিকেলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং পাবনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি ভার্চুয়াল সভা করেন। ওই সভায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ১ কেজি করে পেঁয়াজ বীজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, বিএডিসির থেকে প্রাপ্ত বীজে চারা না গজানোই আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের সবাইকে আবারও ১ কেজি করে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক স্যারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

জেলার হোসনাবাদ পৌরসভার প্রান্তিক কৃষক সমশের শেখ জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এমন কৃষিবান্ধব জেলা প্রশাসক পেয়ে আমরা গর্বিত। আমরা আমাদের যে কোনো সমস্যা নিয়ে সরাসরি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে যেতে পারবো বলেও তিনি আজ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রবি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রাজবাড়ী জেলায় ৪ হাজার কৃষকের মাঝে বিএডিসি হতে প্রাপ্ত বারি পেঁয়াজ-১ জাতের বীজ ৫০০ জন, বারি পেঁয়াজ-৪ জাতের ১০০০ জন এবং তাহেরপুরী জাত ২৫০০ জনকে বিতরণ করা হয়েছিল। উক্ত বীজ না গজানোর কারণে তদন্তপূর্বক ৩ হাজার ৭২৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পুনরায় লালতীর কোম্পানির তাহেরপুরী জাতের বীজ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সেই প্রেক্ষিতে আজ রোববার রাজবাড়ি সদর উপজেলায় ২০০ জন, কালুখালি উপজেলায় ৩০০ জন এবং পাংশা উপজেলায় ৫০০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে পুনরায় এক কেজি করে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। বাকি বীজ এ সপ্তাহের মধ্যেই বিতরণ করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক এই সময়ে পেঁয়াজ চাষিদের দ্রুত পেঁয়াজ রোপণ করার অনুরোধ করেন যাতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা না দেয়।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান সহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে