দীর্ঘ ৯ মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথমদিনে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে প্রায় ৭০০ যাত্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বার আউলিয়া নামে একটি জাহাজ। পর্যটকদের জন্য সেন্ট মার্টিনের দ্বার খুললেও সেন্ট মার্টিনে অধিকাংশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ এখনো বন্ধ আছে।

রাতে সৈকতে বারবিকিউ পার্টিসহ কঠোর বিধিনিষেধের কারণে অনেক পর্যটক দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসছেন। এতে একদিকে খুশি পর্যটকরা, অন্যদিকে হতাশার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের দাবি, সেন্ট মার্টিনে পর্যটক সীমিতকরণ ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে পর্যটন খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল দ্বীপের মানুষ। 

সি প্রবাল বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক বলেন, সেন্ট মার্টিনে ২ শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট আছে। ১০ হাজার পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা। জেলা প্রশাসন থেকে দৈনিক ২ হাজার পর্যটক আসার অনুমতি দিয়েছে। ২ হাজার পর্যটকের মধ্যে অনেক পর্যটক দিনে এসে দিনে ফিরে যাচ্ছেন। এতে অনেক কঠিন সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সেন্ট মার্টিন বিচ ইকো রিসোর্টের মালিক জসিম উদ্দিন শুভ বলেন, এখানে অল্প পর্যটক আসেন। তার মধ্যে অনেকেই ফিরে যান। যে অল্প পর্যটক থাকেন বড় বড় রিসোর্টে ওঠেন। এ কারণে ছোট ছোট কটেজ-রিসোর্টগুলো খালি থেকে যায়। দ্বীপের বাসিন্দারা পর্যটক নির্ভর। দ্বীপের বাসিন্দাদের বিকল্প পেশা নেই।

সেন্ট মার্টিন হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জিহাদী বলেন, সেন্ট মার্টিনে ২৩০টি হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস আছে। ২০০ রেস্তোরাঁ আছে। সেন্ট মার্টিনে পর্যটক আসা শুরু হলেও এখনো ৫০ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে। ২ হাজার পর্যটক আসেন। তার মধ্যে অনেক পর্যটক রাত্রিযাপন না করে ফিরে যান। যারা থাকেন তারা ঢাকার মালিকানাধীন হোটেলে ওঠেন। এ কারণে স্থানীয় মালিকানাধীন হোটেলে-মোটেলগুলো বঞ্চিত হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ। যে দোকান ও রেস্তোরাঁ খোলা আছে সেখানে তেমন কাস্টমার ও পর্যটক নেই। রেস্তোরাঁগুলোতে কাঁচা মাছ কেটে মরিচ মাখিয়ে রাখলেও পর্যটক না থাকায় অলস সময় পার করছেন কর্মচারীরা। ব্যবসায়ীদের চোখে-মুখে অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের ছাপ। কেউ জীবিকার লড়াইয়ে হঠাৎ অনিশ্চয়তা দেখছেন, কারও আবার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ভিটেমাটি হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম।

সেন্ট মার্টিন পূর্বপাড়া এলাকার সি ফাইন্ড রেস্তোরাঁর এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচলের ৮দিন হলেও এখনো ১০ জন পর্যটকও আসেনি। রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেও বিদ্যুৎ বিল ও কর্মচারী বেতনও তুলতে পারেনি। এখানে বিদ্যুৎ এক ইউনিট ৫৮ টাকা। আমার রেস্তোরাঁয় মাসে ৪৬ হাজার টাকা বিল আসে। আমাদের কথা কেউ চিন্তা করে না।

সেন্ট মার্টিনের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল রহমান বলেন, এখানকার মানুষ অলস সময় পার করছে। কারণ পর্যটক কম। এখানে পর্যটক নিয়ে টানাটানি হাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা ঋণের মাধ্যমে হোটেল-মোটেল গড়ে তুলেছেন। সরকার আমাদের দুঃখের বিষয়টি যেন বোঝে। 

সেন্ট মার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, সেন্ট মার্টিন রুটে ৭-৯টি জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু এবারে ৪টি জাহাজ চলাচল করছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিসেম্বর ও জানুয়ারি— এই দুই মাস দৈনিক দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। তখন কোনো পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। 

আরএআর