৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রাণরক্ষার কথা বলে সেনানিবাসে কারা আশ্রয় নিয়েছিল জাতির সামনে তা খোলাসা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনকে নিয়ে আমরা সুস্পষ্ট তথ্যের দাবি তুলেছি। আইএসপিআরও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সংখ্যার কথা স্বীকার করেছে। এটি নিয়ে বাজারে অনেক গুজব, অনেক ডাল-পালা রয়েছে। আমরাও এটি নিয়ে ধোঁয়াশায় আছি। ক্যান্টনমেন্টে গেলে এ রকম আশ্রয় পাওয়া যায় কখনো জানতাম না বা আগে শুনিনি। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কতজন ছিল, কতজনকে গ্রেপ্তার বা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জাতির সামনে তা খোলাসা করা উচিত। কোনো না কোনো সময় এটি বের হয়ে আসবেই।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেনী শহরের একটি রেস্টুরেন্টে ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।  

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো আমাদের সামনে প্রকাশ করতে হবে। দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিল করার দাবি জানিয়েছি। উপদেষ্টারাও আমাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। এটির জন্য আন্দোলন করব। 

মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ও পরবর্তী কার্যকলাপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের সংগ্রাম পত্রিকাসহ অন্যান্য পত্রিকা দেখলে দেখবেন জামায়াতসহ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের শত্রু ও ভারতের দালাল বলতেন। এখন উনারাই (জামায়াত) তাদের বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল ও স্বাধীনতা-বিজয় দিবস পালন করেন। এসব করে আপনি (জামায়াত) নিজেই তো উল্টে গেছেন। আগে খারাপ বলে এখন বলছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। এজন্য ভুল স্বীকার করে একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে। অতীতে তাদের খারাপ বলে, স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা করে ভুল করেছি- এটিতো বলতে হবে। 

মঞ্জু বলেন, অতীতে আমরা দলের মধ্যে এসব আলোচনা করেছি। এ বিতর্কের সমাধান না করে উল্টো আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন উনারাই বিষয়টি সমাধান করুক। তারা (জামায়াত) আওয়ামী লীগকে মাফ করে দিতে বললে মানুষ এখন গলা টিপে ধরে। সুযোগ মতো সংস্কার, ভুল ত্রুটি স্বীকার করতে হয়। 

বাংলাদেশে আর ভারতের আধিপত্যবাদের সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া ভুল হয়েছে এমনটি পোষণ করলে এ দেশে কারো রাজনীতি করার অধিকার নেই। এখানে জিয়াউর রহমান, মতিউর রহমান নিজামীসহ অনেকে মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তারা তো ভারতে যায়নি। ভারতের আধিপত্যের দিন আর নাই। ইতোমধ্যেই এটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। 

সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক থেকে দেড় বছর লাগতে পারে উল্লেখ করে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমাদের অবস্থান একদম সুস্পষ্ট। আমরা সময় বলে দিয়েছি। সংস্কারের জন্য এক থেকে দেড় বছর লাগতে পারে। সব মিলিয়ে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে একটি নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। এ সরকার আগে স্থানীয় নির্বাচন করবে বলে শুনতে পাচ্ছি। অন্য কোনো ষড়যন্ত্র না হলে এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা এতোদিন ঠিকভাবে চলাফেরা, ব্যবসায় করতে পারেননি তারা এখন সব করতে পারছে। স্বাধীনভাবে চলতে পারছে। মানসিকভাবে স্বস্তি পাচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি-যানজটের চাপে ছিল, সেটি এখনো আছে। যত সংস্কারের কথা বলেন, সাধারণ মানুষের কল্যাণ না হলে, রিলিফ না পেলে এ সংস্কারে তাদের কিছু যায় আসে না। এটি সরকারকে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এবি পার্টি কোয়ালিশন সরকারে যাবে না। আমরা চাচ্ছি ছাত্রদের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাদের নিয়ে কোয়ালিশন করা। প্রথমবার ইচ্ছে বিরোধী দলে থাকা, পরবর্তীটা বুঝে নেবেন। আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা ভালো একটি অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছি। দেশের জন্য কাজ করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। বর্তমানে আমাদের প্রার্থী দেওয়ার মতো অবস্থা আছে ২৮০ আসনে। চেষ্টা করব ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য।  

জেলা এবি পার্টির সদস্য সচিব অধ্যাপক ফজলুল হকের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
 
এ সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল, জেলা এবি পার্টির আহ্বায়ক মাস্টার আহসান উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

তারেক চৌধুরী/আরএআর