মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বটুলী সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বধর্মীয় মানুষের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বটুলী সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডের পাশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুড়ী উপজেলার সমন্বয়ক তারেক মিয়ার পরিচালনায় ও  ফুলতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম শেলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, ভারতের মিডিয়া প্রতিনিয়ত ভিত্তিহীন ও বানোয়াট খবর প্রচার করছে বাংলাদেশ নিয়ে। এগুলো বন্ধ না হলে উভয় দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই, এতো অপপ্রচারের পরও তারা শান্ত আছে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। এই সম্প্রীতি ইতিহাস হয়ে থাকবে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় মিডিয়াগুলো অপপ্রচার না করে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে। হলুদ সাংবাদিকতা বাদ দিয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। 

তিনি আরও বলেন, ছাত্রসমাজ বিজয় অর্জনের ১২২ দিনে মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে। আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার নায়কদের নিয়ে আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান হবে না, প্রত্যেক ধর্মের মানুষ এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। আমরা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করব। ইনশাআল্লাহ। 

বিক্ষোভ সমাবেশ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, সাগরনাল ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শরফ উদ্দিন, ইউপি সদস্য ইমতিয়াজ গফুর মারুফ, জুড়ী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য ও জায়ফরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতীশ চন্দ্র পাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের জুড়ী উপজেলা সভাপতি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক দিবাকর দাশ, ইউপি সদস্য স্বপন মল্লিক, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ফুলতলা ইউনিয়ন সভা মিলন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক আতিতোষ রায় পাপ্পু, ফুলতলা চা বাগানের পুরোহিত রাজেন্দ্র প্রাসাদ পাণ্ডে, এলবিন টিলা খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী এন্টোনি পাটরটি, স্বরস্বতী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল চন্দ্র পাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আফজাল হোসাইন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফুলতলা চা বাগানের পুরোহিত রাজেন্দ্র প্রাসাদ পাণ্ডে বলেন, আমাদের পূজা থেকে শুরু করে মুসলমান ভাইয়েরা একসঙ্গে থাকি। আমরা কোনো সময় মনে করি না কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান, কে মুসলিম, আমরা সবাই বাংলাদেশের এক মায়ের সন্তান। আমরা সবাই সুন্দরভাবে মিলেমিশে বসবাস করি। আমরা সবাই বাংলাদেশের সন্তান। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়, খ্রিস্টান সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সামাজিক সংগঠন, স্থানীয় এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক পিংকু চন্দ্র পাল বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সেটা আমাদের ধর্মীয় পরিচয়। কিন্তু আমাদের জাতিগত পরিচয় আমরা বাংলাদেশি এবং আমরা বাঙালি। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলেই কঠোরভাবে ঐক্যবদ্ধ। দেশ ও জাতির কল্যাণে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সদা প্রস্তুত।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সীমান্তের চেকপোস্ট অতিক্রম করতে চাইলে বিজিবি সদস্যা বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়। বাধা অতিক্রম করে সামনে যেতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা মানবপ্রাচীর তৈরি করেন। পরে বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে আনেন মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান।

আরএআর