সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াত আপস করেনি, করবেও না
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামি কখনো আপস করেনি। এখন করছে না, ভবিষ্যতেও করবে না। বাংলাদেশ বিভিন্ন গোলাপের গঠিত দেশ। এই দেশের সব ধর্মের বর্ণের সমস্ত মানুষ আমরা মিলেমিশে আছি, কারণ বাংলাদেশ আমাদের সবার।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি-শক্তভাবে বলেছি, আমাদের এই বাংলাদেশে কোনো মাইনরিটি-মেজরিটি আমরা মানি না। বাংলাদেশের যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারাই বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। এই মাইনরিটি শব্দ বলে বলে অন্যান্য ধর্মের ভাই-বোনদের ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠী মূলত দেশের বাইরে থেকে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগর জামায়াত ইসলামির কর্মীসভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, আজকে বাংলাদেশের সবাই সোচ্চার হয়েছেন। তারা দেখেছেন ভারতীয় হলুদ মিডিয়া যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট যুদ্ধ শুরু করেছে। তখন জগন্নাথ হল থেকে আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা বের হয়ে তার প্রতিবাদ করেছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, তোমরা যা প্রকাশ করছো অসত্য, তা মিথ্যা। আমাদের ব্যবহার করে তোমাদের স্বার্থ হাসিল করতে আমরা দেব না। ভারত কেন আমাদের সঙ্গে এটা করে? কী ক্ষতি করেছি ভারতের? ভারতের কোনো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমরা হস্তক্ষেপ করেছি? ভারত বলে আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সহিষ্ণুতার অভাব। সারা বিশ্ব দেখছে ভারতের কোন উগ্র একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের কাছে কোন ধর্মের মানুষ নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে। বাংলাদেশে এমন কোনো নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটে না।
জামায়াতের আমির বলেন, গত ১৭ বছর জাতির জন্য একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ ছিল। মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারেনি, জনগণ ও দেশপ্রেমিক বিভিন্ন বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পর পিলখানায় দেশপ্রেমিক বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করা হলো। তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করলো। নির্মমভাবে হত্যার পর লাশগুলো ড্রেনের মধ্যে ভাসিয়ে দিলো। রাতের আঁধারে হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীদের নিরাপদে পিলখানা থেকে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করল।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা বলেছিলাম ব্যক্তিগতভাবে, দলগতভাবে কাউকে আঘাত করব না। আইন হাতে তুলে নেব না। প্রতিশোধ নেওয়ার মানে হচ্ছে আইন হাতে তুলে নেওয়া। আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনার আমরা বিচার চাই। বিচার যদি না হয় তাহলে বিচারহীনতাই সন্ত্রাসীদের আরো বেশি সন্ত্রাসী করে তুলবে।
শফিকুর রহমান আরও বলেন, যদি আল্লাহ আমাদের দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন তাহলে আমরা কথা দিচ্ছি, দুর্নীতি করবো না, দুর্নীতির সুযোগ দেব না। এমন একটা শিক্ষার মডেল তৈরি করতে হবে যেন দুনিয়ার মানুষ শিক্ষা নিতে এখানে আসে। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়ব যে বাংলাদেশে মসজিদ পাহারার দরকার হবে না, মসজিদ-গির্জা-প্যাগোডার পাহারার দরকার হবে না। যে যার ধর্ম পালন করবে সেখানে কেউ হস্তক্ষেপ করার সাহস পাবে না। মাঝে মধ্যে উসকানি দেওয়া হয়। যারা উসকানি দেয় তারা বিকৃত মস্তিষ্কের। তাদের কোনো উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না।
জামায়াত আমির বলেন, এই যে বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমরা দেখি। এই সমাজটা গড়বে কে? আপনাদেররই গড়তে হবে। আমরা এক আল্লাহর উপর ভরসা করে এগোতে চাই। আমাদের নিজের জীবনে আগে এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অনেক বাধা আসবে। সব বাধাকে অতিক্রম করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বলা হয় এরা (জামায়াত) যদি ক্ষমতা যায় তাহলে মহিলাদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। এক মহিলা সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনার ক্ষমতায় গেলে কি বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তান হবে না পাকিস্তান হবে? আমি বললাম বাংলাদেশ বাংলাদেশই থাকবে। বাংলাদেশ আফগানিস্তান হবে না, পাকিস্তানও হবে না।
‘আমি বললাম, মহিলারা পেশাগত দক্ষতা প্রমাণে পোশাকের শালীনতা দেখাবেন, তবে দুইটা ভালো জিনিস হাতে পাবেন। একটা হল মর্যাদা, আরেকটি নিরাপত্তা। এখন নারীদের মর্যাদা দেওয়া হয় না, নিরাপত্তা তো নাই। কেন তারা পারবে না? রাসুলে পাক (সা.) যুদ্ধের ময়দানে নারীদের যুদ্ধের সুযোগ দিয়েছেন। আমরা কেন তাদের ঘরে বন্দি করে রাখব? মহিলারা কেন ঘর থেকে বের হবে না? তার কী সামাজিক দায়িত্ব নাই? রাসেল পাক (সা.) রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, আমরা কেন তাদের বন্দি করে রাখব?
তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো অন্যায়, বৈষম্য চাই না। কেউ যদি অন্যায় করে, আমাদের দলের কেউ করে আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব ইনশাল্লাহ। যিনি অপরাধ করবেন তিনি অবশ্যই শাস্তি পাবেন।
জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ভেতর ৫ আগস্টের পর জামায়াত ইসলামের কোনো একজন কর্মী কারও কাছ থেকে এক পয়সা চাঁদা চেয়েছে এমন কোনো নজির নেই। আমরা ভোগের জন্য রাজনীতি করি না। মানুষের মালিক বনে যাওয়ার রাজনীতি করি না। আমরা রাজনীতি করি মানুষের খাদেম হওয়ার রাজনীতি, সেবার রাজনীতি। এজন্য এত জুলুমের নিষ্পেষিত একটি দল, যেকোনো দুর্যোগে সবার আগে হাজির হয়েছি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি মিডিয়ার ভাইদের প্রতি দুটি অনুরোধ জানাতে চাই। মিডিয়াকে বলা হয় জাতির দর্পণ। মিডিয়ার সঙ্গে যারা কাজ করেন কর্মকর্তা-সাংবাদিক বন্ধুদের বলা হয় জাতির বিবেক। আমরা জানি গত সাড়ে ১৫ বছর স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেওয়া হতো আপনারা কী বলবেন আর কী লিখবেন। কিন্তু এখন আপনারা সঠিক এবং সত্য প্রচার করুন। এখন আর কারও স্ক্রিপ্টে চলবেন না। আপনারা চতুর্দিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখবেন, সামনে-পেছনে এবং দুই পাশে। তখন কালো না সাদা সেটাও বুঝতে পারবেন। আসুন আমরা সাদা কে সাদা বলি কালোকে কালো বলি। আপনারা জাতির চতুর্থ স্তম্ভ, এই স্তম্ভ মজবুত হলে জাতি মজবুত হবে, ইনশাআল্লাহ।
সবশেষ তিনি বলেন, কুমিল্লাবাসীর দুইটা ন্যায্য দাবি কে দূরে রাখা হয়েছে। আমরা দোয়া করি তাদের এই ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ হোক।
জামায়াত ইসলামির কুমিল্লা মহানগরীর আমির কাজী দীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ কেন্দ্রীয় জামায়াতের অন্যান্য নেতারা।
আরিফ/এসএম