বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, আজকে ভারতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আজকে বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। ২০ কোটি মানুষের ৪০ কোটি হাত আমাদের। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন বাঙালিদের কাছে একটি রাইফেলও ছিল না। আমরা যুদ্ধ করেছি, ৩০ লাখ লোকের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, আমরা ইসলামাবাদ থেকে ঢাকা এনেছি ঢাকা থেকে দিল্লি যাওয়ার জন্য নয়। এটা দিল্লি নয়, এটা ঢাকা। 

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমীর হল রুমে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু শেখ মুজিব সেই গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছেন। সেই কারণেই ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে অনিবার্য ছিল। গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ না থাকার কারণে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ অনিবার্য ছিল। যেমনিভাবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ভেগে যেতে হয়েছে, কারণ শেখ হাসিনা তার বাবার মতোই হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষকে গুলি করেছে। যার মধ্যে ২ হাজার মানুষ মারা গেছে আর হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা বিগত ১৭ বছর এদেশে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, তিনটি নির্বাচন হাসিনা বিনা ভোটে নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে থেকে এদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ৫টি করিডোর দিয়েছেন, ট্রেন চুক্তি করেছেন, আদানির সাথে অবৈধ চুক্তি করেছেন, বাংলাদেশের তিনটি বন্দর অবৈধ লিজ দিয়েছেন, সেই কারণেই আজকের অর্থনীতির এ অবস্থা। আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ২০ লাখ কোটি টাকা শেখ পরিবার বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে। 

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, মেগা প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে আর মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতেন। মুক্তিযুদ্ধে তো আপনাদের কোনো অবদান নেই। এদেশের কৃষক শ্রমিক জনতা যারা যুদ্ধ করেছেন তারা তো মুক্তিযুদ্ধের অংশীদার হতে পারেননি। আর ৫ বছরের, ২ বছরের, ৩ বছরের আওয়ামী পরিবারকে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আজকে যে সংকট বাংলাদেশের তা ১৯৭১ সালে সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে যখন পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র হাজার হাজার বাঙালি মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে তখন তাদের প্রিয় নেতা (শেখ মুজিব) আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান চলে গেলেন। তিনি জাতিকে কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি। আর আওয়ামী লীগের বাকি নেতারা আত্মগোপন করে ভারতে চলে গেলেন। কিন্তু অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়া, তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্নেল জানজুয়াকে হত্যা করে বিপ্লব ময়দানে ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে বললেন উই রিভোল্ট। আমরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তানিদের সাথে। তারপর ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই সেদিন বাংলাদেশের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, অন্য কারো ঘোষণার মধ্য দিয়ে নয়। 

বুলু বলেন, ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেই সুযোগ কেউই গ্রহণ করেনি। জাতিকে সেদিন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। উনি রণাঙ্গনে ৯ মাস যুদ্ধ করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বলতে চাই আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব যদি শেখ পরিবারের একজনও রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করে থাকেন। দুয়েকজনের নাম বলতে হবে। 

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে এ সময় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আরিফ আজগর/আরএআর