রাজবাড়ীতে বিএডিসির নষ্ট পেঁয়াজ বীজ বপন করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ৪ হাজার কৃষকের পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় কৃষক সমতি রাজবাড়ী জেলা শাখা। 

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বরে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তারা বলেন, বিএডিসির কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকার বীজ জেলার ৪ হাজার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এসব বীজ বপন করার ১৫ থেকে ২০ দিন অতিবাহিত হলেও অঙ্কুরোদগম হয়নি। এতে হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। এতে কৃষকের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে নষ্ট বীজের কারণে এবছর জেলায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ কম হবে। যে সকল কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারকে আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।

বক্তারা বলেন, রাজবাড়ী জেলার সকল গণতান্ত্রিক লড়াই, প্রতিটি মানুষের মুখে আহার যোগানো কৃষক সমাজের ভূমিকা অনন্যা অতুলনীয়। অথচ সেই কৃষক সমাজ আজ অবহেলিত ও বঞ্চিত। এদেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে কৃষকের স্বার্থকে নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উপকরণের মূল্য কমাতে হবে। ব্যাংক ঋণের সুদ কমিয়ে সরল সুদে কৃষকদের ঋণ দিতে হবে। এছাড়া এনজিও ঋণের সুদ কমাতে হবে।

মানববন্ধন শেষে জাতীয় কৃষক সমিতি রাজবাড়ী জেলা শাখার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মরাক লিপি প্রদান করা হয়েছে।

জাতীয় কৃষক সমিতি রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি ছলেমান আলী দলুর সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কৃষক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝুন্টু, জাতীয় কৃষক সমিতি রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার সরকার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির জেলা কমিটির উপদেষ্টা আব্দুস সামাদ মিয়া, জাতীয় কৃষক সমিতি জেলা শাখার সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক  মাসুদ করিম, সদর উপজেলা জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আরব আলী, জাতীয় কৃষক সমিতি পৌর শাখার সভাপতি আবদুল বারেক মোল্লা বক্তব্য রাখেন।

জাতীয় কৃষক সমিতি রাজবাড়ী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় জাতীয় কৃষক সমিতি রাজবাড়ী জেলা শাখা,সদর উপজেলা শাখা ও পৌর শাখার নেতাকর্মীরা ও সাধারণ কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, রাজবাড়ী জেলায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জেলার ৫ উপজেলায় বিনামূল্যে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সরকারিভাবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক সরবরাহকৃত পেঁয়াজের বীজ (পেঁয়াজের দানা) চাষিদের মাঝে বিতরণ করে। কিন্তু বীজতলায় ২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি। চলতি বছরে জেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও নষ্ট বীজের কারণে এবছর ৭ থেকে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ কম হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫ উপজেলায় রবি প্রণোদনা হিসাবে ৪ হাজার কৃষকের মাঝে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়। বিএডিসির সরবরাহকৃত এসব বীজ বিতরণ করে জেলা কৃষি বিভাগ। জেলার সদরে ১ হাজার, পাংশায় ১ হাজার, কালুখালীতে ৮০০ বালিয়াকান্দিতে ১ হাজার ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪০০ কেজি কৃষকের মাঝে এসব বীজ বিতরণ করা হয়। এসব বীজ ক্রয়ের জন্য কৃষি বিভাগ বিএডিসিকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। বিনামূল্যে বিতরণকৃত এসব বীজ থেকে প্রায় ৮ হাজার জমিতে পেঁয়াজের আবাদ সম্ভব ছিল বলে জনায় কৃষি বিভাগ।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে