ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল খুলনা
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে শিল্পনগরী খুলনা। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দিনে ও রাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, মশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
বিএনপির বিক্ষোভ
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার দুপুরে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় খুলনার কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে খুলনা মহানগর বিএনপি।
সমাবেশে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্য পাঁয়তারা করছে ভারত। একাত্তরে স্বাধীনতা হয়েছিল করাচির বিরুদ্ধে, ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে। কখনোই দিল্লির কাছে নতজানু হওয়ার জন্য একাত্তরের যুদ্ধ করা হয়নি। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব অক্ষত রাখবার জন্য। ভারত তার প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ, সেখানে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির দেশ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকার তাদের থাকতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ তাদের মাথার ওপর কারো দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না। আমরা বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে চোখ-কান খোলা রেখে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাই। জাতীয় ঐক্যই বিদেশি যে কোনো আগ্রাসন রুখে দিতে পারে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন ফকরুল আলম, স. ম. আ. রহমান, বেগম রেহেনা ঈসা, অ্যাড. নুরুল হাসান রুবা, কাজী মাহমুদ আলী, শের আলম সান্টু, আবুল কালাম জিয়া, বদরুল আনাম খান, মাহাবুব হাসান পিয়ারু, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, একরামুল হক হেলাল, মাসুদ পারভেজ বাবু, শেখ সাদী, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ, কেএম হুমায়ুন কবীর, হাফিজুর রহমান মনি, শেখ জাহিদুল ইসলাম, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ প্রমুখ।
ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর মজিদ সরণি এলাকায় ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ খুলনার মাশাল মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় ইসকন ও ভারতবিরোধী স্লোগানে গর্জে ওঠে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ মিছিলে তারা স্বৈরাচার হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও তার সব অঙ্গসংগঠনের বিচার দাবি করেন।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদ খুলনা মহানগর সভাপতি মো. বিল্লাল হোসেন ও খুলনা জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি জিএম আজিজুল ইসলাম।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মো. ফয়সাল শেখ, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. ফরহাদ হাসান রাজ, মো. সোহাগ মোল্লা, মো. মাঈনুল ইসলাম লিটন, মো. রুহুল আমিন, মোল্লা রবিউল ইসলাম রবি, মো. রবিন, মো. লিয়াকত, মো. সেলিম, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. সাব্বির রহমান শুভ, মো. রাজু হাওলাদার প্রমুখ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কাতারে কাতারে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে হাদী চত্বরে এসে জড়ো হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচারের সঙ্গী, ইসকন তুই জঙ্গি’, ‘যদি চাও মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’, ‘ইসকনের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘একটা গোলামি না যাবি, আজাদি আজাদি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ভারত। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেবে না। বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে, তারা বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না। ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আমাদের সম্পর্ক ধ্বংস করেছে। আমাদের পতাকা পদদলিত করেছে। এটা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ কখনো মেনে নেবে না। বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ও সিলেট, ফেনী সীমান্তে উগ্র ভারতীয়দের আক্রমণের প্রতিবাদে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি কুয়েট স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে শুরু হয়ে হলগুলো প্রদক্ষিণ করে ফুলবাড়িগেট মোড় হয়ে মেইন গেইটে এসে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন মো. ওমর ফারুক এবং জাহিদুর রহমান।
বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রসমাজ
বুদ্ধিভিত্তিক রাজনীতির প্রবক্তা ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর নিজ হাতে তৈরি ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রসমাজ, খুলনা জেলার আয়োজনে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় ছাত্রসমাজ খুলনা জেলার আহ্বায়ক আলাউদ্দীন খান, সদস্য সচিব মুশফিকার শামস মেনান প্রমুখ।
পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল খুলনা নিউমার্কেট বায়তুন নূর জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে নিউমার্কেট এলাকা প্রদক্ষিণ করে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
যুব অধিকার পরিষদ
ত্রিপুরার আগরতলাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত ৮টায় খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড় থেকে খুলনায় অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে সোনাডাঙ্গা থানা যুব অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মোহাম্মদ মিলন/এএমকে