সীমান্তে এসে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে ভারতীয়দের সমাবেশ
ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরে ভারতীয় সীমানা থেকে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন উগ্র বক্তব্য ও স্লোগান দিয়েছেন ভারতীয়রা। সনাতনী হিন্দু সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানান তারা। গতকাল রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় বিলোনিয়া স্থলবন্দর এলাকায় ভারতের নো ম্যান্সল্যান্ডে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের দিকে মাইক তাক করে উচ্চশব্দে প্রায় ৩০ মিনিট উগ্র বক্তব্য ও নানা স্লোগান দেন তারা। এ সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও (বিএসএফ) সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। পরে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুতুল দাহ করেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে সেখানে বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা উসকানিমূলক ও কটাক্ষ করে কথা বলেন তিনি। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ভিডিওতে ওই ব্যক্তি বলেন, দেশ (বাংলাদেশ) যার ওপরে ভরসা রাখে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপরে থাকে তারা আজ কোনো কাজ করছে না। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তাদের পোশাক রেখে মৌলবাদীর পোশাক পরে হিন্দু নিধনের কাজ চালাচ্ছে। বাংলাদেশে যেভাবে অনৈতিকভাবে হিন্দুদের অত্যাচার করছে, আমরা সীমানা ডিঙিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে অক্ষরে অক্ষরে জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আপনাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে মিথ্যা মামলায় অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) করেছে। উনার বাড়িও কিন্তু বেশি দূর নয়, এ বিলোনিয়াতেই। শিগগিরই তাকে মুক্তি দিতে হবে।
ওই ব্যক্তি বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনারা সতর্ক হয়ে যান। এ সীমানা পার হতে আমাদের মাত্র এক মিনিট সময় লাগবে। অস্ত্র-লাঠি হাতে নিয়ে, যার যেমন খুশি তা হাতে নিয়ে গিয়ে আপনাদের সঠিক জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছি। অতিবিলম্বে আমরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করছি।
এ সময় ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ইসকন ও মন্দিরের ওপর হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না’, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ কর, করতে হবে’, ‘রাজাকার-মৌলবাদ, নিপাত যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।
বিলোনিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে চেকপোস্টের প্রবেশ মুখে ভারতের কিছু লোকজন উগ্র স্লোগান দিতে শুরু করে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। স্থলবন্দরের কার্যক্রমও স্থিতিশীল রয়েছে।
আতঙ্কে সীমান্তের বাসিন্দারা
এদিকে সীমান্তে ভারতীয়দের এমন উগ্র বক্তব্যে স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তাদের দাবি, বিগত কোনো সময়ে এমন কিছু দেখা যায়নি। এ নিয়ে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান তারা।
মো. সাকিব নামে স্থানীয় এক তরুণ বলেন, রোববার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আকস্মিক বিলোনিয়া স্থলবন্দরে এসে সনাতন ধর্মের লোকজন বাংলাদেশকে নিয়ে কটাক্ষ করে নানা উগ্র কথা বলেছেন। তারা বাংলাদেশের দিকে মাইক তাক করে আধাঘণ্টার বেশি সময় এসব বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এপারের মানুষজন আতঙ্কে দিন পার করছি।
মাসুদ নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, বিগত সময়ে কখনো এ ধরনের ঘটনা দেখিনি। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চাই। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখতে হবে।
যা বলছে বিজিবি
ভারতীয়দের এমন কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ প্রসঙ্গে বিজিবির মজুমদারহাট বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সৈয়দ কামরুল আলম মজুমদার বলেন, ওই সময় বিজিবির সদস্যরা বিলোনিয়া স্থলবন্দরে অবস্থান নেন। পরে বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডারকে ডেকে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়নের (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ। কিন্তু ইসকনের ভারতীয় কিছু লোকজন সীমান্তে এসে উগ্র বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) অবহিত করা হয়েছে। আগামীতে সীমান্তে এ ধরনের কিছু হবে না বলে তারা আশ্বস্ত করেছেন।
তারেক চৌধুরী/আরএআর