ভাড়ার টাকা তছরুপের দায়ে দুই অ্যাটেনডেন্ট বরখাস্ত
বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার নামে আদায় করা অর্থ তছরুপ করার অভিযোগে দুই অ্যাটেনডেন্টকে (পরিচর্যক) সাময়িক বরখাস্ত করেছে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত ও শোকজ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বরখাস্তাদেশ প্রাপ্তরা হলেন- লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের ক্যারেজ ডিপোর অ্যাটেনডেন্ট সোহেল রানা ও আব্দুর রব রাহাত।
রেলওয়ে দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনে বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ বিনা রশিদে অর্থ আদায় করে তছরুপ করেন উক্ত ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট সোহেল রানা ও আব্দুর রব রাহাত। ঘটনাটি ভিডিও করে এক যাত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। এ ভিডিওর বিষয়ে বক্তব্য জানতে রোববার লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবুর কাছে যান ঢাকা পোস্টের লালমনিরহাট প্রতিনিধি নিয়াজ আহমেদ সিপনসহ তিনজন সাংবাদিক। ভিডিওটি দেখার পরই সাংবাদিকদের ওপর তেড়ে উঠে হেনস্তা করেন ওই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের রুম থেকে বের করে দেন।
এ ঘটনায় জেলার সাংবাদিকরা ফুঁসে উঠলে নিজের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে অভিযুক্ত দুই অ্যাটেনডেন্ট সোহেল রানা ও আব্দুর রব রাহাতকে শোকজ করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে সোমবার আদেশ জারি করেন রেলওয়ের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু। শোকজের জবাব আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়। একইসঙ্গে পৃথক আরেক আদেশে তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্তাদেশের চিঠিতে বলা হয়, বরখাস্তকালীন সময় তারা খোরাকি বাবদ বাবদ মূল বেতনের অর্ধেকসহ রেলওয়ের বিধিমতো অন্যান্য ভাতা প্রাপ্য হবেন। এ আদেশ রোববার (১ ডিসেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
লাঞ্ছিত সাংবাদিকদের একজন ঢাকা পোস্টের লালমনিরহাট প্রতিনিধি নিয়াজ আহমেদ সিপন বলেন, বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বাবদ টাকা নিলেও তাদের রশিদ দেওয়া হয়নি, এমন একটি ভিডিও আসে আমাদের হাতে। যা নিয়ে লালমনিরহাটের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবুর মতামত জানতে তার কার্যালয়ে যাই আমরা তিনজন সংবাদকর্মী। এ সময় তিনি আমাদের ওপর তেড়ে উঠে হেনস্তা করে রুম থেকে বের করে দেন। যারা রাজস্ব আত্মসাৎ করলো তাদের শুধু বরখাস্ত নয়, চাকরিচ্যুত করতে হবে। একইসঙ্গে যে কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের হেনস্তা করেছে তারও ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো জেলার সাংবাদিকরা বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
লালমনিরহাটের বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মো. আব্দুস সালাম বলেন, যাত্রীসেবার সঙ্গে কোনো ধরনের অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের হেনস্তা করার বিষয়েও তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এমজেইউ