বিয়ের জন্য চাপ, থানা থেকে লুট করা অস্ত্র দিয়ে প্রেমিকাকে হত্যা
থানা থেকে লুট করা পিস্তল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে প্রেমিকা সাহিদা আক্তারকে প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময় (২৮) গুলি করে হত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রেমের সম্পর্ক থেকে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। পরে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় প্রেমিকাকে গুলি করা হত্যা করেন প্রেমিক।
গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভোরে ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটিও উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত তৌহিদ শেখ তন্ময় রাজধানীর ওয়ারীর বর্ণগ্রাম এলাকার মৃত শফিক শাহর ছেলে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫ আগস্টের পর ঢাকার ওয়ারী থানা হতে লুট করা একটি পিস্তল দিয়ে গুলি করে সাহিদাকে হত্যা করা হয়। পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক। পরে অনৈতিক সর্ম্পকের জের ধরে সাহিদাকে গুলি করে হত্যা করেছে তার প্রেমিক।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, সাহিদাকে হত্যার ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের কাছে তৌহিদের বিষয়ে জানতে পেরে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের একাধিক দল কাজ করছিল। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি তৌহিদ ভোলায় আছে। রোববার রাতে আমাদের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। সেখান থেকে তৌহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তৌহিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যে অস্ত্র দিয়ে সাহিদাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেটি কেরানীগঞ্জের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মহাসড়কের সমসপুর এলাকার দোগাছী সার্ভিস সড়ক থেকে সাহিদা আক্তারের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় সময় মরদেহের পাশে ৫টি গুলির খোসা পড়ে ছিল। নিহতের শরীরে আটটি গুলির ছিদ্র ছিল।
আরও পড়ুন
হত্যার কারণ সর্ম্পকে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আজাদ বলেন, তৌহিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তৌহিদ আমাদেরকে বলেছেন, সাহিদার সঙ্গে তৌহিদের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সম্পর্ক থেকে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। এর মধ্যে তৌহিদ অন্য একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিষয়টি সাহিদা জানতে পারেন। এ নিয়ে তাদের একাধিকবার ঝগড়া হয়। তাদের সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে গত শুক্রবার রাতে তৌহিদ মুঠোফোনের মাধ্যমে সাহিদাকে ওয়ারীর বাড়ি থেকে মাওয়ায় ইলিশ খাওয়ার কথা বলে ডেকে আনেন। সাহিদাকে নিয়ে তৌহিদ সারারাত এক্সপ্রেসওয়েতে ঘোরাঘুরি করেন। শনিবার ভোরে তারা শ্রীনগর দোগাছী এলাকায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। সাহিদা কথা প্রসঙ্গে তৌহিদকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। তৌহিদ বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে তৌহিদের সঙ্গে থাকা থানা হতে লুট করা পিস্তল দিয়ে সাহিদাকে গুলি করে হত্যা করেন। ঘটনা ঘটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান তৌহিদ।
নিহত সাহিদা আক্তার ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার বেগুনবাড়ির বরিবয়ান এলাকার প্রয়াত আবদুল মোতালেবের মেয়ে। তিনি ঢাকার ওয়ারী এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
সাহিদা আক্তারকে হত্যার ঘটনায় তার মা জরিনা খাতুন বাদী হয়ে গতকাল রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে শ্রীনগর থানায় মামলা করেছেন। এতে প্রেমের সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে সাহিদা আক্তারের প্রেমিক তৌহিদকে আসামি করা হয়।
ব.ম শামীম/আরএআর