‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে, ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে চবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। একই প্রশ্নের জবাবে চবি ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় সিন্ধান্তের কারণে আমরা সেখানে যাইনি। কেন্দ্রের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ছাত্রশিবির যেসব প্রোগ্রামে থাকবে আমরা সেখানে যাব না।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, অনেকে দাবি করছেন, আমরা জুলাই আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলোর অবদান অস্বীকার করছি। আমরা কখনো কারো অবদান অস্বীকার করিনি। আমরা মনে করি, ছাত্র সংগঠনগুলো পেছনে ছিল বলেই আজকে আমরা সামনে আসতে পেরেছি। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। একইভাবে সামনেও ফ্যাসিবাদকে নির্মুল করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবে খুবই দুঃখ হচ্ছে, আজকে বৃহৎ একটি ছাত্র সংগঠনসহ অন্যান্য  ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর উপস্থিত না দেখে। আপনাদের রাগ-অভিমান থাকতে পারে। এগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি না আসেন তাহলে সমাধানের সুযোগ তো তৈরি হচ্ছে না।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য জোবায়রুল হাসান আরিফ বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির দুইটি বিষয়ে কনসার্ন। প্রথমটি হচ্ছে, জুলাই গণহত্যার বিচার। আমরা লক্ষ্য করছি, জুলাইয়ের বিচার সঠিকভাবে হচ্ছে না। আবার আমরা মবেরও পক্ষে না। আমরা আইনের মাধ্যমে এমনভাবে বিচার করতে চাই, যাতে কখনো কেউ বলতে না পারে ক্যাঙারু কোর্টের মাধ্যমে খুনিদের বিচার হয়েছে। দ্বিতীয় কনসার্নের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার।  আপনারা লক্ষ্য করবেন, আমাদের সংবিধানের পাওয়ার স্ট্রাকচার এমন যে কেউ স্বৈরাচার হতে বাধ্য। আমরা এমন সংস্কার চাই, যাতে সাংবিধানিক ভাবে কেউ আর নতুন হাসিনা হতে না পারে।

চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুহাম্মাদ ইব্রাহীম বলেন, ৫ আগস্টের পর ১০০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো শিক্ষার্থীদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন সমস্যা, প্রতিবিপ্লব ঠেকানোর দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের উপর এসে পড়ছে। অথচ, এখন তাদের রাষ্ট্র গঠনে সভা, সিম্পোজিয়াম-সেমিনার করার কথা। সংস্কার প্রক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত তা দেখানোর কথা।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মো. রোমান রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদলের একটা বড় অবদান ছিল। কিন্তু আজকে ছাত্রদল উপস্থিত নেই যেটা হতাশজনক। আমরা সব দলের মধ্যে যদি ঐক্য ধরে রাখতে না পারি, তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সবার মধ্যে ঐক্য চায়, বিভেদ নয়।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, স্টুডেন্টস এল্যায়েন্স ফর ডেমোক্রেসিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে গত ২৫ নভেম্বর এক সপ্তাহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে  ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই ধারাবাহিকতায়  রোববার চবিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আতিকুর রহমান/আরকে