শহীদ রাকিব ও শাহীন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত দুই শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয় কোনো সহায়তা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। ঘটনার চার মাস অতিবাহিত হলেও কেউ খোঁজ নেননি। এমনকি নিহত হওয়ার পর কর্জ করে টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মরদেহ বাড়িতে আনা হয়েছিল। সেই টাকাও পরিশোধ করতে পারেনি পরিবার।

দুই শহীদের মরদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য উত্তোলনের পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে এলে শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে এই অভিযোগ করেন স্বজনরা।

দুই শহীদ হলেন- জেলার বানারীপাড়া উপজেলার জম্বোদ্বীপ গ্রামের শহীদ রাকিব ও হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের শাহীন।

শহীদ রাকিবের চাচা নূরুল হক ব্যাপারী বলেন, গত ২১ জুলাই নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় রাকিব। ও মারা যাওয়ার পর আমাদের হাতে কোনো টাকা ছিল না। কর্জ করে টাকা এনে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মরদেহ বাড়িতে এনে দাফন করি। ওর পরিবারে রাকিবই উপার্জনক্ষম ছিল। ওর মৃত্যুর পর পরিবারটি নিঃশেষ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে এখন পর্যন্ত এক দিনের জন্যও খোঁজ নেয়নি আমাদের। শুনেছি বরিশালে ছাত্রনেতারা এসেছিলেন। অনেককে ৫ লাখ টাকা করে দিয়েছেন। আমাদের খোঁজও নেয়নি, এক দিন জিজ্ঞেসও করেনি শহীদ পরিবারটি কেমন আছে।

শহীদ শাহীনের বাবা হাসান

শহীদ শাহীনের বাবা হাসান বলেন, আমার ছেলে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। সেখান থেকে বাড়িতে এনে দাফন করেছি। কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি, আর্থিক সহায়তা তো দূরের কথা।

এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসান। তিনি বলেন, শাহীন আমার বড় ছেলে। ওর মৃত্যুর পর আমরা শেষ হয়ে গেছি। আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অথচ বর্তমান সরকারের কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।

শাহীনের বাবা হাসান বলেন, নারায়ণগঞ্জে আমরা মামলা করেছি। সেই মামলার তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সিআইডি কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে নিয়ে এসেছে। শুক্রবার ময়নাতদন্ত হয়নি। আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ দিলে পুনরায় দাফন করবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শহীদ শাহীনের নাম জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অর্থ সহায়তার তালিকাভুক্ত ছিল। কিন্তু তারা কেন সহায়তা পেলেন না তা বুঝতে পারছি না। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা যেন সহায়তা পান।

শহীদ রাকিবের বিষয়ে জানতে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ