হিমালয়ের দ্বিতীয় উচ্চতম ও পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার আগ্রহের কোনো কমতি নেই। কারণ কাঞ্চনজঙ্ঘার একই অঙ্গে অনেক রূপ। মেঘের কোলে রোদ-কুয়াশার সঙ্গে খেলতে খেলতে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম এই পর্বতশৃঙ্গ প্রথমে কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা রং ধারণ করে। ভোরের প্রথম কিরণ যখন কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া স্পর্শ করে তখন শ্বেতশুভ্র এই পর্বতটি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত লাভার মতো লাল।

প্রতিবছর শীত মৌসুমে রূপ-লাবণ্যে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকরা ছুটেন ভারতের সিকিমে নয়তো নেপালের তাপ্লেজুংয়ে। সীমান্ত পার না হতে চাইলে রয়েছে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। যদিও ভারত কিংবা নেপালে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের গণ্ডি না পেরিয়ে অর্থাৎ তেঁতুলিয়াপ্রান্ত থেকেই পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া দেখা যায় অনিন্দ্য সুন্দরে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা।

সামান্য দূরত্বের মধ্যে থাকা এত সুন্দর পর্বতশৃঙ্গ দেখতে উন্মুখ হয়ে থাকেন পর্যটকেরা। যেন মনের প্রশান্তি মিলে তখন যখন কি না চোখে চোখ রাখে কাঞ্চনজঙ্ঘা। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ভোরে ঠিক তেমনি দৃশ্যের অবতারণা করেন হিমালয়কন্যার দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বেতশুভ্র এ পর্বতটি।

পর্যটকদের কারও কারও কাছে এই লোভনীয় দৃশ্য যেন অভাবনীয়। আবার কারও জন্য আক্ষেপ আর অপেক্ষার অবসানও বটে। কারণ কাঞ্চনজঙ্ঘা সব সময় দেখা দেয় না। তাইতো ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ঘুম ভাঙে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অপেক্ষায় থাকা পর্যটকদের। তেঁতুলিয়ার মানুষেরা প্রায়ই ঘুমভাঙা চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার কারণে তাদের কাছে এর তেমন আকর্ষণ নেই। কিন্তু পর্যটকদের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন বহুল কাঙ্ক্ষিত এক সৌন্দর্যের নাম। শুক্রবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে উঁকি দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই বিরল সৌন্দর্য।

স্থানীয়রা জানান, আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। ভোরে উষায় রক্তিম রোদ কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর যেন ঠিকরে পড়ে। সূর্যের কিরণের তেজ বাড়তে থাকলে দেখা মেলে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিন্ন ভিন্ন মায়াবী রূপ। রোদের তেজ বাড়তে থাকলে মিলিয়ে যেতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। শেষ বিকেলেও আরেকবার দেখা দিয়ে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে প্রবাহিত হয়েছে মহানন্দা নদী। এ নদীর ওপারেই বিস্তৃত ভারত-নেপাল ও ভুটান। এপারে তেঁতুলিয়া শহরের একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র ডাকবাংলো পিকনিক কর্নার। এখান থেকেই স্পষ্টভাবে অবলোকন করা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভুটানের দক্ষিণ-পূর্বে কাঞ্চনজঙ্ঘা অবস্থিত।

পাহাড়ের চূড়া ছাড়াও সন্ধ্যায় এখান থেকে ভারতের কালিম্পং শহরের যানবাহন চলাচল, বৈদ্যুতিক আলো, দার্জিলিংয়ের মহকুমা সদর দপ্তর ও রাতে প্রদর্শিত ভারতের সীমান্ত বাহিনীর ওয়াচ লাইট উপভোগ করা যায় ডাকবাংলোর তীর থেকে। আর বিস্তীর্ণ চা-বাগানের সবুজ গালিচার মধ্যে সোনার আলোয় উদ্ভাসিত হয় এর নৈসর্গিক রূপ। এই সময়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে দৃশ্যমান হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে ছুটে আসেন অসংখ্য পর্যটক। চলতি মাসের গত ৬ নভেম্বরের পর আজ শুক্রবার আবারও দেখা দিল কাঙ্ক্ষিত সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা।

পর্যটক ও স্থানীয়দের চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোয় শুক্রবার ভোরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী রনি, মোবারক ও দোয়েলের সঙ্গে হয়। তারা জানান, প্রতিবছর অক্টোবর মাস থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সবাই আসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে। কখনো দেখা মিললেও বেশিরভাগ সময়ই মেঘ-কুয়াশা-রোদের লুকোচুরিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য নজির কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যটকদের খুব একটা নজরে আসে না। তবে বছরে অন্তত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮-১০ বার কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে।

মোবারক হোসেন বলেন, আগে তো আগস্ট মাস থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দিতো। এখন কিছুটা সময় পিছিয়ে গেছে, এর নেপথ্যে প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। তবে এই সময়টা এলেই আমাদের মনটা আনচান করতে থাকে। মন পড়ে থাকে মহানন্দার পাড়ে। এই বুঝি পাহাড়-পর্বত দেখা দিল। এই বুঝি আকাশ ফুঁড়ে উঁকি দিল শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা। দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং পাহাড়ের ওপরে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দেখার আশায় শীতের চাঁদর মুড়িয়ে বারবার ছুটে যাই কাকডাকা ভোরে।

এসকে দোয়েল বলেন, তেঁতুলিয়ার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সেই ছোট থেকে দেখে আসছি কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, কুম্ভকর্ণ, সিনিওলচুসহ আরও অনেক পর্বতশৃঙ্গ। প্রতিবছর দেখেও মন ভরে না। কখনোই পুরোনো হয় না সমতল থেকে পর্বত দেখার আনন্দ। ভারতের পাহাড় ডিঙিয়ে নেপাল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দিলে মনে অন্যরকম একটা আবেগ কাজ করে। পাহাড়-পর্বত দেখলে মনটা উথালপাতাল করে।

ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার। দীর্ঘ এ সড়কপথের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে আকাশপথে নীলফামারীর সৈয়দপুর হয়ে তেঁতুলিয়া এসেছেন মিলিতা বাড়ৈ। উদ্দেশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা, সঙ্গে সমতলের চা বাগান ঘুরে বেড়ানো। তিন দিনের সফরে এসে প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ভোরে কিছুটা ঝাপসা কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পান তিনি। কিন্তু শুক্রবার ভোরটা যেন তার রঙিন হয়ে উঠে কাঞ্চনজঙ্ঘার অবলোকনে।

চোখেমুখে হাসির ঝিলিক নিয়ে মিলিতা বাড়ৈ বলেন, আমি খুবই আনন্দিত। এ দূর থেকে এসে যদি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা না হতো মনে একটা কষ্ট থেকে যেতো। কিন্তু দ্বিতীয়ে যখন সত্যি অনিন্দ্য সুন্দর কাঞ্জনজঙ্ঘা দেখার পর আর অনুভূতি প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এত ভালো লাগছে যা বোঝানো যাবে না। মানুষ তো পাসপোর্ট-ভিসা করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ওপারে যায়, আমি দেশের সীমান্ত থেকেই দেখছি, এটাই তো বড় আনন্দ ও তৃপ্তির। মনের মধ্যে একটা অন্যরকম প্রশান্তি বইছে। কারণ অতীতে অনেকের মুখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসে না দেখতে পাওয়ার গল্পটা বেশি শুনেছি। তবে আমার বেলায় সেটা হয়নি।

পটুয়াখালীর মেয়ে সাজেদা আকতার। বিবাহবন্ধনে তার শ্বশুরালয় তেঁতুলিয়া। দীর্ঘসময় ছিলেন সেখানে। বর্তমানে চাকরিজীবী স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন তিনি। এই গৃহিণী বলেন, মেঘমুক্ত নীল আকাশে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো হতে মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অবলোকন করা সম্ভব। সাধারণত শীতে মেঘমুক্ত আকাশে তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া রোদে চিকচিক করে ওঠে আর ঠিক তখনই কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করা সম্ভবপর হয়। বহুবার দেখেছি তবুও মনে হয় দেখার স্বাদ মেটেনি। নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কত সুন্দর ও সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন।

লালমনিরহাট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা নিয়াজ আহমেদ বলেন, এর আগে বেশ কয়েকবার এসেছি। কিন্তু কখনো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা হয়নি। আবহাওয়ার কারণে বারবার হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছি। এবারও নভেম্বরের শুরুতে এসেছিলাম। তখন একদিন পর ফিরে যাই। তারপর শুনি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার পর মনটা ভালো হয়ে গেছে। আগের সব কষ্ট, ক্ষোভ আর হতাশা যেন নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। রাত জেগে থাকার কষ্টটাও এখন নেই। সবমিলিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাটা খুব ভালো লাগার মতো একটি মুহূর্ত বটে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের অবস্থান

কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতটি ভারত-নেপাল সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত। পর্বতটি নেপালের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এটি নেপালের পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের সিকিম রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতটি হিমালয় পর্বতের একটি অংশ। এই পর্বতের পূর্বে তিস্তা নদী, পশ্চিমে তামুর নদী, উত্তরে লহনাক চু নদী এবং জং সং লা পর্বতশৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘা মাইন্ড এভারেস্ট থেকে ১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত।

কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সর্ব উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মানা হত। কিন্তু ১৯৪৯ সালে ভারতের ত্রিকোণমিত্রিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় যে, মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর প্রথম সর্ব উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ এবং সেই হিসাবে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার কিছু দিন পরে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায় যে, দ্বিতীয় পর্বতশৃঙ্গ হলো ‘কেটু’ যার উচ্চতা ৮,৬১১ মিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার বা ২৪, ১৬৯ ফুট। যে কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে তখন তৃতীয় পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি আকর্ষণ।

কতটা কাছাকাছি কাঞ্চনজঙ্ঘা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা হতে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। এখান থেকে সুস্পষ্ট দেখা মিলে হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্ট চূড়ার সুন্দর দৃশ্য। বাংলাবান্ধা হতে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার। এভারেস্ট চূড়া ৭৫ কিলোমিটার, আর ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার দূরে। চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিং ৫৪ কিলোমিটার এবং ভারতের শিলিগুড়ি ৮ কিলোমিটার দূরে।

তেঁতুলিয়ায় কীভাবে যাবেন

তেঁতুলিয়ায় বিমানবন্দর না থাকায় এখানে সরাসরি আকাশপথে আসা যায় না, তবে ঢাকা থেকে সরাসরি বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সঙ্গে। ঢাকা থেকে বিমানযোগে  নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর এসে সেখান থেকে সড়কপথে তেঁতুলিয়া আসা যায়। এক্ষেত্রে বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ব্যবহার করতে পারবেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়কপথে এসি ও নন-এসি বাসে পঞ্চগড়ে যাওয়া যায়। অধিকাংশ বাসের শেষ গন্তব্য থাকে তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্দা স্থলবন্দর। রেলপথেও যাওয়া যায় পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে চলাচল করে। পঞ্চগড়-রাজশাহী রুটে চলে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস। পঞ্চগড় শহর থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

ভ্রমণে এসে থাকবেন যেখানে

পঞ্চগড় জেলা শহরে রয়েছে সার্কিট হাউসসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের গেস্টহাউস। বেসরকারিভাবে সেন্ট্রাল গেস্টহাউস, হোটেল মৌচাক, হোটেল প্রিতম, অগ্রদূত প্যালেস, এইচ কে প্যালেস, ধানসিঁড়িসহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে পঞ্চগড়ে।

তেঁতুলিয়ায় রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি হোটেল ও বাংলো। মহানন্দা নদী ঘেঁষে উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত শতবর্ষী পুরোনো তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো। ব্রিটিশ আমলের এই ডাকবাংলো বর্তমানে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো হিসেবে পরিচিত। আগেভাগে যোগাযোগ করে এই ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন। পুলিশের অফিসার্স মেস, উপজেলা পরিষদের বেরং কমপ্লেক্স, সড়ক ও জনপদের গেস্টহাউস, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গেস্টহাউস, বন বিভাগের গেস্টহাউস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের গেস্টহাউসে থাকার ব্যবস্থা আছে।

এ ছাড়া তেঁতুলিয়ায় বেসরকারিভাবে হোটেল দোয়েল, স্কয়ার হোটেল, স্বপ্ন গেস্টহাউস, কাঠের বাড়ি গেস্টহাউস, হোটেল সীমান্তের পাড়, হোটেল কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাজী ব্রাদার্স এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও পরিচালিত মহানন্দা কটেজসহ রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল।

পঞ্চগড়ে আর কি আছে দেখার

পঞ্চগড়ে পর্যটকেরা শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতেই আসেন না। এ জেলায় রয়েছে আরও কিছু ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় স্থলবন্দরটি রয়েছে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায়। তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়ালে নজর কাড়বে নুড়ি–পাথর তোলার দৃশ্য। দেশের একমাত্র সমতলভূমির চা চাষ হয় এ জেলায়। চা–বাগান ঘুরেও নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে পারবেন।

আরও রয়েছে মোগল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ। এটি জেলার আটোয়ারী উপজেলায়। এই উপজেলার মির্জাপুরে আছে বার আউলিয়া মাজার। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নে আছে সতীর গোড়ালিসমৃদ্ধ বোদেশ্বরী মন্দির। দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন মন্দিরটির নাম গোলকধাম। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত স্থাপনা। মন্দিরটি শালডাংগা গ্রামে অবস্থিত।

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তঘেঁষা ভিতরগড় এলাকায় আছে দেড় হাজার বছরের পুরোনো সুবিশাল মহারাজার দিঘি। এ ছাড়া সেখানে আছে দুর্গনগরী। দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর ‘রকস মিউজিয়াম’ ঘুরতে দেখতে পারেন। জাদুঘরটি পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের দোতলা একটি ভবনে।

যা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বী বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। যেহেতু একদিকে তেঁতুলিয়া পর্যটন এলাকা অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার মৌসুম, তাই পর্যটকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আমরা নজর রেখেছি। তারা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে নজর রাখছি।

তিনি আরও বলেন, আবাসিক হোটেল থেকে শুরু পরিবহনের লোকজনের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তারা দেখেন। আর থানা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমজেইউ