কচুরিপানায় বন্ধ খরস্রোতা খাল, পানির সংকটে আড়াইলাখ মানুষ
বরগুনার আমতলী উপজেলায় সুবন্ধি নামের একটি খালে দীর্ঘ এক দশক ধরে জমে আছে কচুরিপানা। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি খাল নাকি একটি সবুজের গালিচা বিছানো পথ, অথবা একটি বিশাল মাঠ। এক সময় খালটির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে কচুরিপানায় তা বন্ধ হয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমতলী উপজেলার সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণ করতে ২০২১ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হাতে নেওয়া ওই প্রকল্পটিতে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি থাকায় তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে দিনদিন ওই খালটিতে কচুরিপানার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তির চরমে পৌঁছেছে খালটির দুই পাড়ের দুটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।
বিজ্ঞাপন
বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া এ দুটি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুবন্ধি নামক খালটির দুই পাড়ে অন্তত ২০টি গ্রামের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করেন। এসব বাসিন্দাদের পানির চাহিদা পূরণে খালটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও কচুরিপানার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি দূষিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন গবাদিপশুর গোসল করানোসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না এ খালটির পানি। এ ছাড়াও আটকে থাকা কচুরিপানায় দূষিত হওয়া পানির কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে হরহামেশাই আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মো. জলিল নামের হলদিয়া এলাকার এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে খালের মধ্যে কচুরিপানা জমে আছে। এ খালে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা মাছ ধরতে পারছেন না। আবার অনেকের গরু-ছাগল আছে কিন্তু কচুরিপানার কারণে খালের পানিতে গোসল করাতেও পারছেন না। তবে যাদের টিউবওয়েল আছে তারা সে পানিতেই গোসলসহ সব কাজ করতে পারছেন। কিন্তু যাদের টিউবওয়েল নেই তাদের অনেক সময় বাধ্য হয়ে খালের দূষিত পানিই ব্যবহার করতে হয়। এলাকাবাসীর এমন দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেও এখন পর্যন্ত কেউ খালটির কচুরিপানা পরিষ্কারকারের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন
একই এলাকার বাসিন্দা মো. বাবুল মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কচুরিপানার কারণে খালের পানি নষ্ট হওয়ায় এলাকার কেউ এ পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। এ ছাড়া দূষিত পানির কারণে মশা-মাছি জন্মে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে হয় আমাদের। আমাদের দাবি এ খালে জমে থাকা কচুরিপানা দ্রুত অপসারণ করা হোক।
মো. মকবুল হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বছরের পর বছর আমাদের এ খালের মধ্যে কচুরিপানা জমে আছে। কেউ এর সমাধানে কাজ করেন না। নদীর দুই পাড়ে আমরা যারা বসবাস করি তারা এখন মশা-মাছির কারণে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারি না। এ ছাড়া শুকনো মৌসুমে আমাদের অনেকের পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। পানির প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে তখন খালের দূষিত পানিও ব্যবহার করতে পারি না। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদেরকে পানির ভোগান্তিতে থাকতে হয়।
এ অবস্থায় সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণে এলাকাবাসীর দাবি ও খালটির পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমতলী উপজেলার প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুবন্ধি খালে জমে থাকা কচুরিপানা অপসারণের জন্য আমাদের অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়া খালটির সঙ্গে যেসব খালের সংযোগ রয়েছে সেগুলোর বর্তমানে খননকাজ চলমান রয়েছে। যাতে করে সুবন্ধি খালের পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা যায়। সংযোগ খালগুলোর খনন কাজ শেষ হলেই সুবন্ধি খালে জমে থাকা কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু করা হবে।
মো. আব্দুল আলীম/এএমকে