বৈষম্যবিরোধী যশোরের কমিটি ‘প্রশ্নবিদ্ধ’, যুগ্ম আহ্বায়কের পদত্যাগ
নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে ১১৪ সদস্যের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
এদিকে জেলা কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই সদ্য ঘোষিত কমিটিতে স্থান পাওয়া সদস্যরা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ করে উক্ত কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ। বুধবার (২৭) বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আন্দোলন করে আসছি। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে এমন অনেককেই রাখা হয়েছে যারা সমাজের কাছে নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের মানবিক গুণাবলিও প্রশ্নবিদ্ধ। এই কমিটির অধীনে কাজ করলে আমার নৈতিক গুণাবলির অধঃপতন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। ছোটবেলা থেকে নৈতিকতার প্রশ্নে আমি কখনো আপস করিনি। শুধু আমার নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার সদ্য ঘোষিত কমিটি থেকে আমি পদত্যাগ করছি। তবে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সকল দাবির সঙ্গে আমি ছিলাম, আছি এবং থাকব ইনশাআল্লাহ।
এক প্রশ্নের জবাবে মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ কমিটিতে আমার গ্রুপের কেউ স্থান পায়নি। যাদের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়, ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত তারা বড় বড় পদ-পদবি পেয়েছে। যশোরে বৈষম্যবিরোধীর দুটি গ্রুপ ছিল, একটি রাশেদ খানের এবং একটি আমার। রাশেদ খানের গ্রুপের অধিকাংশ এ কমিটিতে স্থান পেয়েছে কিন্তু আমার গ্রুপের কেউ এ কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় আমি স্বেচ্ছায় কমিটি থেকে পদত্যাগ করছি।
এদিকে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর মাসুম বিল্লাহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপিং সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এ সকল অভিযোগের ব্যাপারে মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম আমাকে অভিযোগটা দেখান। যশোরে আমার আর রাশেদের দুটি গ্রুপ ছিল।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, কমিটি কেন্দ্র ঘোষণা করেছে। এখানে বিতর্কিত কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি। যারা প্রকৃত অর্থে আন্দোলন করেছে তারাই এই কমিটিতে স্থান পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাসুম বিল্লাহর ছাত্রত্ব নেই। তার ছাত্রত্ব আরও পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। তবুও সিনিয়রিটি মেইনটেইন করে তাকে কেন্দ্র যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দিয়েছিল।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সদস্যসচিব জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি বলেন, কমিটি কেন্দ্র থেকে দিয়েছে। কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে কে বিতর্কিত এবং কে সুশীল সেটা কেন্দ্রই ভালো বলতে পারবে। অব্যাহতি নেওয়া ব্যক্তিগত ব্যাপার বা তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে চলি এবং চলব।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক (যশোরের দায়িত্বে থাকা) আকরাম হোসাইন রাজ বলেন, কমিটি দেওয়ার আগে সকলকে বলা হয়েছিল কমিটি নিয়ে কারও কোনো আপত্তি বা বিতর্কিত কমিটি মনে হলে বা কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে সেটা আমাদের জানাতে। জানালে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু মাসুম বিল্লাহ কেন্দ্রকে কিছুই জানায়নি, না জানিয়ে সে অব্যাহতি নিয়েছে।
এ্যান্টনি দাস অপু/এমজেইউ