নেত্রকোণায় স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড, সহযোগীর যাবজ্জীবন
নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী মো. রাসেল মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার (২৭ নভেম্বর) নেত্রকোণা জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এই দণ্ডাদেশ দেন।
এ ছাড়া মামলার ২ নম্বর আসামি হিমেল মিয়াকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং মূল আসামি রাসেলের মা মাজেদাকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
বিজ্ঞাপন
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. রাসেল মিয়া বারহাট্টা উপজেলার চরসিংধা গ্রামের আ. হাসিমের ছেলে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হিমেল মিয়া একই গ্রামের বাসিন্দা। তারা একে অপরের দূর-সম্পর্কের আত্মীয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে রাসেল মিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বারহাট্টা উপজেলার সিংধা গ্রামের বাসিন্দা মো. রহিজ মিয়ার মেয়ে তমালিকার (২০) বিয়ে হয়। কিন্তু তমালিকার সঙ্গে বিয়ের পূর্বে রাসেল মিয়া মামলার ৪ নম্বর আসামি রোকেয়াকে বিয়ে করেন এবং তালাক দেন, যা তমালিকার পরিবারের কাছে গোপন করা হয়। বিয়ের কিছুদিন পর হতে রাসেল মিয়া পুনরায় তার তালাক দেওয়া স্ত্রী রোকেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এ ছাড়া একাধিক সিম ব্যবহার করে বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এতে তমালিকা বাধা দিলে রাসেল একাধিকবার তাকে মারধর করেন।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় একমাস পূর্বে আসামি রাসেল তার স্ত্রী তমালিকার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে হাত-পা বেঁধে মারধর করেন। যার কারণে তমালিকা তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরবর্তীতে রাসেল এবং স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টার দিকে খাওয়াদাওয়া শেষে তমালিকা ঘুমাতে যান। পরে রাত ২টার দিকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে মামলার সাক্ষীরাসহ আশপাশের লোকজন তমালিকার শ্বশুরবাড়িতে ছুটে গিয়ে বসতঘরের সামনে বারান্দায় তমালিকার গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরবর্তীতে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তমালিকার মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তমালিকা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল।
মামলার এজাহারে আরও জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ২টা ৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। রাসেল মিয়া ও হিমেল মিয়া তমালিকার শাশুড়ি মাজেদাকে হাত-পা বেঁধে ঘরে আটকে রাখে। পরবর্তীতে মাজেদা তার ছেলেকে এই হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে একটি ডাকাতির নাটক উপস্থাপন করেন।
এ ঘটনায় ওই বছরের ১০ জানুয়ারি তমালিকার বাবা মো. রহিজ মিয়া বারহাট্টা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদীসহ মোট ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ এই রায় দিয়েছেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল হাশেম এবং আসামিপক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. আব্দুল কাদির।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/এমজেইউ