শেরপুরের মুর্শিদপুরে দোজা পীরের দরবারে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে হাফেজ উদ্দিন মারা যান। তিনি হামলার ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এর আগে দোজা পীরের দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৮ জনকে আটক করে।

আটকৃতরা হলেন- শেরপুর সদর উপজেলার দহরিয়াপাড় গ্রামে উসমান মিয়ার ছেলে জয়নাল (৩২), নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের আয়াতুল্লাহর ছেলে মামুন (১৭), সদর উপজেলার সাতপাকিয়া গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে শহীদ (৩৫), লছমনপুর গ্রামের ছামিদুলের ছেলে মজনু (২৬), বয়ড়াপরানপুর গ্রামের সামউদ্দিনের ছেলে এনামুল হক (৩৫), লছমনপুর ঝাউয়েরচর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আসিফ (১৬), কান্দা শেরীরচর ইদু মিয়ার ছেলে হাফেজ (৩৯) ও বলাইয়েরচর গ্রামের মঞ্জিলের ছেলে জিসান (২২)। আটককৃতদের মধ্যে দুইজন গুরুতর আহত হাফেজ ও জয়নাল ছিল। হাফেজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে হাফেজ মারা যায়।

পুলিশ, লিখিত অভিযোগ ও দরবার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে স্থানীয় একটি মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসী সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় অবস্থিত মুর্শিদপুর দরবার শরিফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাদের অভিযোগ, পীরের দরবারে ইসলাম পরিপন্থি কার্যকলাপ পরিচালিত হয়।

মঙ্গলবার ভোরে মাদরাসা শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলামসহ ৪০০-৫০০ লোকজন মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা চালান। তারা দরবারের টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ সময় দরবারে থাকা খাদেম ও অন্য মুরিদরা তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে দরবার থেকে কয়েকটি পেট্রল বোমা এবং অবিস্ফোরিত কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। 

এ ঘটনায় দরবার শরিফের খাদেম মাহমুদান মাসুদ বাদী হয়ে স্থানীয় একটি মাদরাসার সুপারসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় মামলা করেন। অপরদিকে মাদরাসার পক্ষ থেকে দরবার শরিফের লোকজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।

শেরপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম বলেন, এ ঘটনায় মুর্শিদপুর দরবার শরিফের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আটজনকে আটক করেছে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছে। পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

নাইমুর রহমান তালুকদার/আরএআর