কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের রানীবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহতরা হলেন—জনি বিশ্বাস (৩০), তার স্ত্রী নিপা রানী সরকার (২৬), এবং তাদের দুই সন্তান দ্রুব বিশ্বাস (৮) ও কথা বিশ্বাস (৪)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনি বিশ্বাসের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আনারাবাদ গ্রামে। বাবার নাম গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাস। জনি আট বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে ভৈরবে বসবাস করে আসছিলেন।

স্বজনরা জানান, ভৈরব বাজারের বাগানবাড়ি এলাকায় মিজান মিয়ার ওয়ার্কশপে হেডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন জনি। ৯ বছর আগে গাজীপুরের নির্মল মল্লিকের মেয়ে নিপা রানী মল্লিককে বিয়ে করেন তিনি। জনি-নিপা দম্পতির দুই সন্তান ধ্রুব ও কথা। ধ্রুব স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। নিপা আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন।

স্বজনরা আরও জানান, গত রোববার দুপুরে পরিবার নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে রায়পুরা উপজেলার আনারাবাদ নিজ গ্রামে আসেন জনি বিশ্বাস। পরদিন বিকেলে ভৈরবের ভাড়া বাসায় যান তারা। জনি সাধারণত সকাল ১০টার মধ্যে ওয়ার্কশপে কাজে যেতেন। একই ওয়ার্কশপে কাজ করেন জনির আপন মাসতুতো (খালাতো) ভাই ঝোটন প্রামাণিক। ওইদিন সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও কাজে না আসায় ওয়ার্কশপের মালিক মিজান মিয়ার নির্দেশে ঝোটন যান জনিকে ডেকে আনতে। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা না খোলায় ফিরে আসেন। আবার যান বেলা আড়াইটায়। তখনো দরজা না খোলায় ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে যান। পরে দরজার চৌকাঠের একটি ছিদ্র দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখতে পান জনির মরদেহ ঝুলছে। এরপর পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

এদিকে বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি রায়পুরা উপজেলার আনারাবাদে আসে। সেখানে কান্নায় ভেঙে পরে প্রতিবেশীসহ স্বজনরা।

নিহত জনির মা শিখা রাণী বিশ্বাস বলেন, চার ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় জনি। ২০১৪ সালে বড় ভাই রনি বিশ্বাসের সঙ্গে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয় মুক্তা রাণী সরকারের। সেখান থেকে রনির ছোট ভাই জনি ও মুক্তার ছোট বোন নিপা দুজন দুজনকে পছন্দ করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিষয়টি দুই পরিবারে জানাজানি হলে বড় ভাই রনির বিয়ের তিন মাসের মাথায় জনি ও নিপার বিয়ে দেয় দুই পরিবার। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই চাকরির সুবাদে জনি পরিবার নিয়ে ভৈরবে একটি বাসা বাড়িতে থাকে। সেখানে সে ওয়ার্কশপের কাজ করে সংসার চালাতো। একপর্যায়ে তাদের একটি ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। নিপা আবারও সন্তানসম্ভবা। সব মিলিয়ে তারা ভালোই চলছিল। রোববার পরিবার নিয়ে বাড়িতে আসে। পরদিন বিকেলে চলে যায়। মঙ্গলবার বিকেলে খবর পাই তারা সবাই মারা গেছে। এখন কি থেকে কি হয়েছে সেটা ভগবান ভালো বলতে পারবে।

নিহত নিপার বড় বোন মুক্তা রাণী সরকার বলেন, তাদের মধ্যে হয়তো ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে ঝগড়া হয়েছে। তখন ছেলে হয়তো রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আমার বোন ও বাচ্চাদের হত্যা করে নিজে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এখন পুলিশের তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সঠিকটা জানা যাবে।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, বিষয়টি নিয়ে সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন বাহিনী তদন্ত করছে। এখনই কিছু বলা সম্ভব না। তবে নিহতের বাড়ির দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। আমরা তদন্ত করছি এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কি আসে সেটারও অপেক্ষায় রয়েছি। এ ঘটনায় নিহত জনির মা বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

তন্ময় সাহা/এএমকে