সরকারি বিধি অমান্য করে বরিশালের কালাবদর ও পার্শ্ববর্তী মেঘনা নদীর তীরের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প্রায় প্রতি রাতেই স্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বাল্কহেডে ভরতি করে নদী পথেই ঢাকার কয়েকটি ইট ভাটায় মাটি চালান করা হয়।

জানা গেছে, কালাবদর ও ইলিশা নদীর পলিতে গড়ে ওঠা শ্রীপুর ইউনিয়নটি বেশ কয়েক বছর ধরেই নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে। ভাঙনের কারণে শতাধিক মানুষের বসতভিটা এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।

এই ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের বংশের কয়েক পরিবার সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে ঢাকায় পাড়ি দিয়েছে। আমরাও ভাঙনের তীরে চলে এসেছি। ভাঙন ঠেকানোরও কোনো উপায় নেই। কয়েকটি গ্রুপ আছে ভেকু দিয়ে তীরের মাটি কেটে নিয়ে যায়। আগের সরকারের আমলেও হয়েছে, এখনও মাটি কাটা চলছে।

আরেক বাসিন্দা হেনা বেগম বলেন, রাত বাড়লেই মেশিন আইসা মাটি কাটা শুরু করে। মনে করেন, রাত ৮টা থেকে ফজরের আজান পর্যন্ত মাটি কাটে। নদীতে বড় বড় মেশিন নিয়ে আসে। মাটি কেটে নদী পথেই তারা চলে যায়। শীতের সিজন শুরু হয়েছে, এখন প্রতিদিনই মাটি কাটবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা বিধৌত হিজলা উপজেলার জাঙ্গালিয়া ও চরগোপালপুরে ইউনিয়ন সংলগ্ন নদী তীর ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুরের কয়েকটি স্থান খাস, এমন ৩/৪টি স্থান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনকে বার বার জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তীরের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন- বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মুনতাসির মামুন সোহাগ, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান গাজী, শ্রীপুর ইউনিয়নের যুবদল নেতা নুরুজ্জামান উজরাত। এদের সঙ্গে উত্তর জেলা যুবদল ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ পদের একজন দুজন জড়িত বলে জানা গেছে।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মনতাসির মামুন সোহাগ। তিনি জড়িত নয় দাবি করলেও প্রতিবেদককে তাকে সহায়তা করার প্রস্তাব দেন।

জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মিজানুর রহমান গাজী বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি কিছু লোক মাটি কাটছে। তারা এলাকার পার্টির লোক। এক পর্যায়ে প্রতিবেদককে নিউজ না করার প্রস্তাব দেন।

বিষয়টি নিয়ে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, যারা জড়িত তাদের এলাকাবাসীকেও প্রতিহত করতে হবে। প্রশাসন স্থানীয়দের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১ এর খসড়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটা, বালি উত্তোলন: বেআইনিভাবে সরকারি বা বেসরকারির ভূমি, নদীর পাড়, তলদেশ ইত্যাদি থেকে মাটি বা বালু উত্তোলন করলে (কোন ক্ষতি হোক বা না হোক) অপরাধ হবে। সেজন্য ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে