দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে তৃতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন মালিকদের ডাকা পরিবহন ধর্মঘট। এর ফলে বেকায়দায় পড়েছে ভারতফেরত পাসপোর্টযাত্রীরা।

বেনাপোল চেকপোস্ট-সংলগ্ন বন্দর বাস টার্মিনাল থাকায় এতদিন বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট লেগে থাকত। যে কারণে বিঘ্নিত হতো আমদানি-রপ্তানিসহ ভারতফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সেবা। এ অঞ্চলে যাতায়াতকারী সাধারণ যাত্রীদেরও ভোগান্তির শেষ ছিল না।

এই পরিস্থিতিতে গণ মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণ করে সরকার। যানজট নিরসনে কাগজপুকুর নামক স্থানে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ করে বেনাপোল পৌর কর্তৃপক্ষ। যা ২০২৩ সালের ৪ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। যদিও বাস টার্মিনাল নির্মাণের ২ বছর ও উদ্বোধনের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও নানা কারণে চালু করা যায়নি টার্মিনালটি। এর ফলে জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়ে যায় আরও।

এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে গত ৭ নভেম্বর যশোর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসনের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাজী নাজিব হাসানের নেতৃত্বে পৌর বাস টার্মিনালের কার্যক্রম চালু করা হয়। আর এই সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেন কোলকাতার সঙ্গে পেট্রাপোল থেকে সংযুক্ত সাত-আটটি পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তারা নির্দেশনা অমান্য করে বাস চালাতে থাকে।

এদিকে সম্প্রতি বন্দরবিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেইকেল টার্মিনাল উদ্বোধন শেষে বাস টার্মিনাল চালু করার নির্দেশ এবং একই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি চলাচলকারী বাস ছাড়া সব ধরনের বাস চেকপোস্ট থেকে উঠিয়ে টার্মিনাল থেকে চলাচলের নির্দেশ দেন। যা মানতে নারাজ পরিবহন মালিকরা।

পরিবহনের কর্তৃপক্ষের দাবি ৪ কিলোমিটার দূরে যাত্রীদের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়াও যাত্রীদের থাকা, খাবার সুব্যবস্থা না থাকাসহ নানা অভিযোগে চেকপোস্ট থেকে বাস ছাড়ার দাবিতে কোনো পরিবহন বেনাপোল আসেনি।

পরিবহন কর্তৃপক্ষের লোকজনের দাবি ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সব পরিবহন অনেক রাতে বেনাপোল পৌঁছে। টার্মিনালে নিরাপত্তাসহ নানা অসুবিধা থাকায় তারা চেকপোস্টে যাত্রী নামিয়ে খালি বাস নিয়ে টার্মিনালে ফিরে যেত। শনিবার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই চেকপোস্টে অবস্থিত টার্মিনালে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ কারণে তারা ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছে। পরিবহন কর্তৃপক্ষ বেনাপোল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নাভারন মোড়ে যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌর প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান বলেন, আমরা তো চেকপোস্টের বাস টার্মিনাল বন্ধ করিনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী টার্মিনালের গেট বন্ধ রেখেছে। টার্মিনালের গেট বন্ধ থাকার কারণে শুক্রবার গভীর রাতে গাড়িগুলোর যাত্রী পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে দিয়েছিল। রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস চেকপোস্টে গেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, একটা সমস্যা হলে তার সমাধানও আছে। বাস মালিকের প্রতিনিধিরা তো আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো। তারা এলাকায় একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য এসব করেছেন। আলোচনা না করেই বাস বন্ধ রাখছেন—এটা সঠিক কাজ করেননি।

এএমকে