বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন শহীদ বাচ্চুর স্ত্রীর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন পটুয়াখালীর মো. বাচ্চু। বর্তমানে তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী। অনেকে সাহায্যের আশ্বাস দিলেও, কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছে ভুক্তভোগী পরিবারের।
শহীদ মো. বাচ্চু পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবারিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডস্থ পশ্চিম শারিকখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ হাওয়ালারের ছেলে। তিনি ঢাকার লালমাটিয়ার একটি কাটিং ফিটিং দোকানের একজন কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন।
বিজ্ঞাপন
সাম্প্রতিক সময়ে শহীদ মো. বাচ্চুর বাড়িতে গেলে তার পরিবারের অসহায় অবস্থা খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আনন্দ মিছিল নিয়ে বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন বাচ্চু। মিছিলটি যখন মোহাম্মদপুরের আদাবর থানার সামনে যায় তখন পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।
শহীদ বাচ্চু ছিলেন দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক। বাবার মৃত্যুর পর নির্জনা, মাসুমা ও মুন্নার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। উপার্জন না থাকায় অর্থনৈতিক সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই শহীদের পরিবার। ঠিক এই মুহূর্তে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ন্যায় বিচারের দাবি করছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
বাচ্চুর বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার বলেন, আমার বাবার চলে যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই। আমি চাই, সরকারি বা স্থানীয়ভাবে যাতে আমাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। যাতে আমি আমাদের পরিবারের হাল ধরতে পারি।
স্বামীকে হারিয়ে এখন প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন শহীদ বাচ্চুর স্ত্রী লাইলি বেগম। সংসারের বর্তমান অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এসময় তিনি বলেন, তিন সন্তানকে নিয়ে বর্তমানে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছি। অনেকে বলছে সাহায্যের কথা, কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। শুধু জামায়াতে ইসলামী ২ লাখ টাকা দিছে, সেটা পাওনাদারদের পরিশোধ করছি। এই মুহূর্তে সরকারের সহায়তা ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব না। পাশাপাশি আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, আমি তাদের বিচার চাই।
বাচ্চুর ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, আমার ভাই হারিয়েছি, হাজার কান্না করলেও আমার ভাইকে ফিরে পাব না। আমার ভাবি এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। আমরা চাই আমার ভাইয়ের মেয়েকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিক, সে সংসারের হাল ধরুক।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইফফাত আরা জামান উর্মি বলেন, আমরা বাচ্চু আকনসহ উপজেলার সব শহীদদের তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। সরকারি সহায়তা এলে অবশ্যই তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বর্তমানে চেষ্টা করব উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করতে।
রায়হান/আরকে