কুমিল্লার দাউদকান্দির গোমতী ব্রিজ নির্মাণকাজ চার বছরেও শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। চার বছরে দুই দফায় সময় বাড়িয়েও ঝুলে আছে ব্রিজটি। ফলে আশপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে দাউদকান্দি উপজেলার সদর উত্তর ইউনিয়নের গোমতী নদীর ওপর ৫৭০ মিটার দীর্ঘ কদমতলী-হাসনাবাদ সেতুর কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

যার ব্যয় ধরা হয় ৫৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কুমিল্লার মঈনউদ্দিন ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজ (জেভি) যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে ওই গোমতী সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সেতুর কাজ সম্পন্ন করার জন্য দু’দফায় সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ১৫২টি পাইলের মধ্যে ১৪১টি পাইলের কাজ শেষ হলেও আরও ১১টি পাইল নির্মাণসহ সেতুর অবকাঠমোর আরও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে রড ও ঢালাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানিতে নষ্ট হচ্ছে মালামাল।

স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত করোনার অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখা হয়। জুলাই মাস থেকে ধীর গতিতে কাজ শুরু। পরে আবার মাঝে মধ্যে বন্ধ রেখে কাজ শুরু হয়। এতে গত ৪ বছরে সেতুর অর্ধেক কাজ এখনও বাকি আছে। সময় মতো সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়নসহ তিতাস ও মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সেতু চালু না হওয়ায় দাউদকান্দি উপজেলার হাসনাবাদ ভিটিকান্দি, কান্দারগাঁও, বাহেরচর, বাজরা, বটতলী ও গঙ্গাপ্রসাদ। তিতাস উপজেলার দুধঘাটা, দড়িগাঁও, চরকাঠাঁলিয়া, কাকিয়ালী, মোহনপুর, উজিরাকান্দি, সাতানী, চারআনি, নন্দীরচর, মঙ্গলকান্দি, বারকাউনিয়া,কালীরবাজার, ভূঁইয়ার বাজার, নন্দনপুর, বালুয়াকান্দি, জগতপুর ও চরকুমারিয়া এবং মেঘনা উপজেলার আলীপুর, বিনোদপুর, চরবিনোদপুর ও হিজলতলী গ্রামের মানুষ নৌকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গোমতী নদী পারাপার হচ্ছেন।

দাউদকান্দির বাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা জাহেদ সরকার বলেন, সময় মতো কাজ করলে এ সেতুর নির্মাণ অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু উপজেলা সদর থেকে উত্তর ইউনিয়ন এবং তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কিছু অংশে যেতে এখন নির্ভর করতে হয় খেয়া নৌকার ওপর। এতে সময় অপচয় হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগ বাড়ছে।

বাহেরচর ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, গ্রামের লোকজন ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা খুবই জরুরি। 

মোহনপুর গ্রামের ব্যবসায়ি নাসির মুন্সী বলেন, সেতু না থাকায় নৌকায় নদী পার অনেক সময় চলে যায়। ঠিকমতো নৌকা পাওয়া কঠিন।

চারআনী হাসনাবাদ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মনু মিয়া বলেন, এ সেতু নির্মিত হলে উপজেলা সদর উত্তর ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২৫/৩০টি গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সমস্যা দূর হবে। সাশ্রয় হবে অর্থ ও সময়ের। সময়মতো কাজ না হওয়ার বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী নাঈমুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন করোনা মহামারী এবং কয়েক দফায় বন্যার কারণে প্রকল্প এলাকায় কাজে সমস্যা দেখা দেয়। এখন নতুন করে কাজ শুরু করা হয়েছে।

দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী স্নেহাল রায়  বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে আর সময় দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার গত সম্প্রতি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন এবং প্রকল্প এলাকায় কাজ শুরুর জন্য মালামাল নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত সময় অনুসারে ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে বিধি মোতাবেক তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হবে।

এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমি গত ৩ নভেম্বর কুমিল্লায় যোগদান করেছি। যোগদান করার পর ওই ব্রিজটি পরিদর্শন করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ হবে।

আরিফ আজগর/আরকে