‘আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলাম। কখনো ভাবিনি এই ১২০ টাকা দিয়েই আমার চাকরি হয়ে যাবে। আমরা ভাবতাম টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে না। নিজে চাকরি পেয়ে এখন বুঝতে পারলাম যে টাকা ছাড়াও পুলিশে চাকরি হয়।’

আবেগাপ্লুত হযে এভাবেই বলছিলেন পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের রাজধারপুর গ্রামের মো. মিরাজ শেখের মেয়ে মোছা. মীরা খাতুন।

রোববার (২৪ নভেম্বর) রাত ৯টায় রাজবাড়ী পুলিশ লাইনস ড্রিলসেডে টিআরসি নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন। এতে ২৩ জন ছেলে এবং ৮ জন মেয়ে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া ৫ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। এ সময় চূড়ান্তভাবে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় জেলা পুলিশ। কোনো প্রকার হয়রানি, সুপারিশ এবং ঘুষ ছাড়া পুলিশের সদস্য হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হতদরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারের এসব তরুণ-তরুণী।

এ সময় এক আনন্দঘন মুহূর্ত দেখা গেছে পুলিশ লাইনস ড্রিলসেডে। নিজ যোগ্যতা ও মেধায় চাকরির ফলাফল পাওয়া মাত্রই ৩১ জন তরুণ-তরুণী আনন্দে বিমোহিত হয়ে পড়েন। অনেকের নাম ঘোষণার পরপরই দুই চোখ আনন্দ অশ্রুতে ভিজে যায়। অনেকেই চাকরি পেয়ে আনন্দ উল্লাস করেন।

ফলাফল ঘোষণা শেষে চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীনসহ নিয়োগ বোর্ড ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কনস্টেবল নিয়োগে চূড়ান্তভাবে প্রথম স্থান অধিকার করা রহিম বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা একজন সাধারণ শ্রমিক। অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়ালেখা করিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমার অনেক ভালো লাগছে আমি একজন গর্বিত পুলিশ সদস্য হতে পেরেছি। আমি অনেক পরিশ্রম করে, পড়ালেখা করে নিজের মেধা দিয়ে আজ পুলিশে চাকরি পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।

পাংশা উপজেলার কুঁড়েপাড়ার বাসিন্দা মো. রিফাজুর রহমান বলেন, আমি পাংশা সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কনস্টেবল পদে সার্কুলার দেখে আবেদন করেছিলাম। আসলে পুলিশের চাকরি একটি আবেগের চাকরি। চাকরিটা আমার খুব দরকার ছিল, পাশাপাশি আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করব। চাকরিটা পেয়ে আমি খুব খুশি।

মীরা খাতুনের বাবা মিরাজ শেখ বলেন, আমি একজন ভ্যানচালক। ভ্যান চালিয়ে দুইটি মেয়েকে মানুষ করেছি। অনেক কষ্ট করে তাদের লেখাপড়া শিখায়ছি। বড় মেয়েটার গতবার চাকরি হয়নি। কিন্তু এবার বিনাপয়সায় চাকরি হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগছে।

ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ কমিটির সভাপতি রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন বলেন, কনস্টেবল নিয়োগের কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে আজ চূড়ান্তভাবে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের তালিকা ঘোষণা করলাম। মেধা তালিকায় রাজবাড়ীতে ২৩ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী নির্বাচিত হয়েছে। যারা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে তারা তাদের সম্পূর্ণ দক্ষতা ও মেধার ভিত্তিতে মনোনীত হয়েছে। যারা মনোনীত হয়েছে তারা বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের, কৃষক পরিবারের সন্তান। মাত্র ১২০ টাকায় অনলাইন আবেদন করার মাধ্যমে তারা আজকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে।

এ সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ লুৎফুল কবির চন্দন, মুন্সীগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) কাজী হুমায়ুন রশিদ, রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীবসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, কনস্টেবল পদে রাজবাড়ীতে অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছিল ২ হাজার ৩৩টি। ৩১ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ১৪৯৭ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ ও শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা শেষে ৩৫৭ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য সিলেক্ট হন। এর মধ্যে ৩৫৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরে ১০৭ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারা রোববার মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে চূড়ান্তভাবে ৩১ জনকে (২৩ জন ছেলে ও ৮ জন মেয়ে) মনোনীত করে রাজবাড়ী জেলা টিআরসি-২০২৪ নিয়োগ বোর্ড ৷ এ সময় অপেক্ষমাণ রাখা হয় আরও ৫ জনকে।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এমজেইউ