পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে ছোট-বড় ফেরিগুলোকে নৌপথের নির্দিষ্ট চ্যানেল ছেড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটিপথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে ফেরি পারাপারে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় বেশি লাগছে।

এদিকে ৭নং ঘাটের কাছে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় এক মাস ধরে বড় ফেরি ভিড়তে পারছে না। নাব্যতা দূর করতে জরুরি কাজের অংশ হিসেবে ড্রেজিং চলছে। অধিকাংশ সময় ঘাটের একাধিক পকেট বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়ার ৭টি ঘাটের মধ্যে নদী ভাঙনে কয়েক বছর ধরে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট চালু থাকলেও নাব্যতা সংকটে বছরের অধিকাংশ সময় ৬ নম্বর ঘাট বন্ধ থাকে। ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল থাকলেও এক মাস ধরে ৭ নম্বর রো রো (বড়) ফেরী ঘাটের কাছে পানি কমে যাওয়ায় ড্রেজিং শুরু হয়।

ঢাকা গাবতলী থেকে আসা রয়েল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক সুজন খান বলেন, নদীতে যখন পানি বেশি ও অনেক স্রোত থাকে, তখন পারাপার হতে ৩০-৪০ মিনিট লাগত। এখন নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এখন নদী পার হতে সময়ও লাগছে দ্বিগুণ।

ফেরী শাহ পরানের দ্বিতীয় মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে প্রতিদিন পদ্মার পানি কমতে থাকায় ফেরি চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে। দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় চ্যানেল দিয়ে ফেরিগুলো সতর্কতার সঙ্গে চলছে। ৭ নম্বর ঘাটের কাছে পানি কমে যাওয়ায় এক মাস ধরে বড় ফেরি ভিড়তে পারছে না। মাঝে মাঝে খুলে দেওয়া হলেও এক সপ্তাহের মতো বড় ফেরি ভিড়ে আবারও বন্ধ হয়ে যায়। একটি মাত্র পকেট চালু থাকায় ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি ভিড়তে পারছে। 

৬ নম্বর ফেরি ঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. চান্দু মোল্লা বলেন, বর্ষাকালে ভাঙনের কারণে ঘাট বন্ধ থাকে। কয়েক বছর ধরে তিনটি ঘাট বন্ধ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কুয়াশায় নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি বন্ধের উপক্রম হয়। সারা বছরই ভোগান্তি নিয়ে এই রুট দিয়ে যাত্রীদের পারাপার হতে হয়। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি সার্ভিস কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে খননকাজ চলমান রয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই নাব্যতা সংকট দূর হয়ে ফেরি পারাপার স্বাভাবিক হবে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের খনন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাছান আহমেদ বলেন, দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া নৌপথের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে ১০০ মিটার প্রশস্ত করে নৌবাহিনীর দুটি ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং চলছে। এই নৌরুটে ফেরি চলাচলের জন্য সাধারণত ১২ ফুট গভীরতা পানি থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে পানির গভীরতা কম থাকায় ড্রেজিং করে নাব্যতা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে