মিনি প্রাইভেটকার তৈরি করে শখ পূরণ করলেন কৃষক রউফ
একটি প্রাইভেটকারের শখ ছিল কৃষক আব্দুর রউফের (৪৫)। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরবেন সেই প্রাইভেটকারে। তবে কৃষক হয়ে গাড়ি কেনার এ শখ পূরণ করা তার জন্য প্রায় অসম্ভব। তাই নিজের স্বপ্ন আর মেধা কাজে লাগিয়ে নিজেই একটি চার চাকার মিনি প্রাইভেট কার তৈরি করেছেন।
আব্দুর রউফ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন কৃষক।
বিজ্ঞাপন
গচ্ছিত মাত্র দুই লাখ টাকা ব্যয়ে গাড়িটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। আব্দুর রউফের ব্যাটারিচালিত গাড়িটি মাত্র ৩০ টাকা বৈদ্যুতিক চার্জ খরচে তিন জন যাত্রী নিয়ে ৫০ কিলো গতিতে ৬০ কিলোমিটার পথ ছুটতে পারে। গাড়িটিতে রয়েছে হুবহু প্রাইভেট কারের মতো পেছনে দুটি সিট, সামনে চালকসহ দুটি সিট, স্টিয়ারিং, ব্রেক, এক্সেলেটর, হেডলাইট, হর্ণ, ব্যাকলাইট ইত্যাদি।
কৃষক আব্দুর রউফ বলেন, অনেকদিন ধরে আমার শখ ছিল একটি প্রাইভেটকার কেনার। আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না তাই কিনতে পারিনি। কৃষি কাজ করে সংসার চলে, আর দৈনন্দিন আয়ের থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখতাম। শখ পূরণ করার চিন্তা থেকেই নিজেই উদ্যোগ নেই একটি প্রাইভেটকার তৈরি করার। তবে সেটি জ্বালানি তেল চালিত নয়, একটি ব্যাটারিচালিত প্রাইভেট কার। মাত্র তিন মাসের প্রচেষ্টায় গত নয় মাস আগে একটি পরিপূর্ণ মিনি প্রাইভেট কার তৈরি করতে সক্ষম হই। এখন আমি, আমার স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে নিজের তৈরি প্রাইভেটকারে চড়ে ঘুরে বেড়াই।
কৃষক আব্দুর রউফ জানান, তিনি যশোর শহরের বিভিন্ন নতুন-পুরাতন মটর পার্টসের দোকান থেকে একটু একটু করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় করে প্রাইভেটকার তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রাইভেট কারটির চ্যাসিস তৈরি করা হয়েছে লোহার এঙ্গেল দিয়ে এবং বডি তৈরি করা হয়েছে প্লেইন সিট দিয়ে। পুঁজি স্বল্পতায় গাড়িটিকে আরও আধুনিকায়ন করতে পারেননি তিনি। তবে কেউ বাণিজ্যিকভাবে গাড়িটি নিতে চাইলে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে এমন প্রাইভেট কার তৈরি করে দিতে পারবেন কৃষক আব্দুর রউফ।
পেশায় কৃষক হয়েও নিজে গাড়ি তৈরি করে অবাক করেছে এলাকাবাসীদের। মাঝে মেঝে গাড়িতে চড়ে ঘুরছেন তারাও। স্থানীয় বাসিন্দা দিলদার হোসেন বলেন, গত কয়েকমাস ধরে দেখছি আমাদের গ্রামগঞ্জের রাস্তায় আব্দুর রউফের গাড়িটি ছুটে বেড়াতে। একজন কৃষক হয়ে এমন প্রতিভা এবং কর্মদক্ষতা আমাদের সকলকে অবাক করেছে। মাঝেমধ্যে দেখি এই গাড়ি চড়ে তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়।
মনিরুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, আব্দুর রউফ এখন আমাদের গ্রামের একটা গর্বের নাম। তার উদ্ভাবনী প্রতিভা আমাদের সবাইকে অবাক করেছে। তার দেখাদেখি অনেক যুবকও এমন গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে আব্দুর রউফের গাড়িতে চড়ি। চড়ে ভবদাহ এলাকায় আইসক্রিম খেতে যাই। আমাদের কাছে গাড়িটিতে চড়তে অনেক ভালো লাগে।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে