‘স্বাধীনের পূর্বে ডাক্তাররা আমাদের যেভাবে ড্রেসিং করাইতেন, তা আপনাদের বলে বুঝাইতে পারবো না। যখন বলতাম, একটু অবশের ইনজেকশন দেন। তখন তারা বলতেন, “আন্দোলনে কেন গেছ, এখন সহ্য করো”।’—এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেছেন গণ-অভ্যুত্থানে আহত নাহিদ হাসান।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১২টায় সদর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে নওগাঁয় স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় আহত এবং শহীদ পরিবারের আবেগঘন স্মৃতিচারণ আর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম।

জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, আন্দোলনে শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবনের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান, গুলিবিদ্ধ আহত নাহিদ হাসানসহ অন্যান্যরা।

আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ নাহিদ হাসান বলেন, গত ২০ জুলাই আমি আহত হই, আমার নাম নাহিদ হাসান, ওখানে আমাকে লিখতে হয়েছে শুধু হাসান। আমি নিজের পরিচয় দিতে পারি নাই। আমি যুদ্ধে গিয়ে আহত হয়েছি—এটা আমি বলতে পারিনি, বলতে হয়েছে আমি পথচারী। এর চেয়ে আর কষ্টের কী আছে। আমার ফ্যামিলিকে বলেছি, আমার পরিচয় গোপন করার কী দরকার বলে দাও, আমি তো মারা যাবোই।

এর আগে ১৯ জুলাই আমার হাতে দুজন ভাই মারা গেছেন। রাতে ঘুম আসতো না শুধু মনে হইতো কখন আন্দোলনে যাবো। আমার এই কথাগুলো কোনো লিখিত স্ক্রিপ্ট না, এগুলো বাস্তবতা।

তিনি বলেন, ‘আমার অনেক ভাই এখনো হসপিটালে, অনেক ভাই এখনো কাঁদছেন। তারা কবে সুস্থ হবে, জানি না। আমার কষ্ট হয়, আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি নাই। আমি এখনো সুস্থ না, তাদের রক্ত লাগবে আমি রক্ত দিতে পারছি না, দেখে আমার অনেক কষ্ট লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি এবং আমার ভাইয়েরা স্বাভাবিক না। তারা যে কী কষ্টে দিন পার করছে আপনাদের বলে বুঝাইতে পারবো না। স্বাধীনের ১৫ দিন পূর্বে আমাদের যে ড্রেসিংগুলো করাইতো আপনাদের বলে বুঝাইতে পারবো না। আমি শুধু বলতাম, আমাকে আপনারা মেরে ফেলে দেন, আমাকে তাও এভাবে ড্রেসিং করাইয়েন না। তারা কসাইয়ের মতো ড্রেসিং করিয়েছেন। তদের যখন বলাতাম, ভাই আমাকে অবশ করান, তখন তারা বলতেন, “আন্দোলনে কেন গেছ, এখন সহ্য করো”।’

এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের স্পিরিটকে বুকে ধারণ করে আগামীর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ করে যাবে। শহীদরা সবসময় আমাদের কাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকবে।’

সভায় নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আহত এবং নিহত পরিবারের পাশে সবসময় জেলা প্রশাসন থাকবে। তাদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।’

পরে আহত ও শহীদদের স্মরণে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মনিরুল ইসলাম শামীম/এএমকে