বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার  আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যারা গণতন্ত্র, মানুষ হত্যা করেছে, খুন করে লাশ পুড়িয়ে ছাই করেছে। দেশের মানুষকে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদেরকে এই দেশে রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। আওয়ামী লীগকে কি গণতান্ত্রিক দল বলা যায়। আপনি গণতন্ত্রের কথা বলে দেশের ক্ষমতায় আসবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন, এটা তাদের অধিকার যারা দল হিসেবে গণতান্ত্রিক। কিন্তু আপনি (আওয়ামী লীগ) দল হিসেবে ফ্যাসিস্ট, নিষ্ঠুর নির্যাতনকারী, গণতন্ত্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যায় না। ফলে জনগণের ওপর আমরা ছেড়ে দিয়েছি, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত অঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দলীয়করণ হয়ে গেছে। এগুলোর সংস্কার জরুরি। আমাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে বিভিন্ন সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। আমরা একের পর এক এসব প্রস্তাবনা দিয়ে যাচ্ছি। ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার কমিশনে জমা হবে। আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের পর সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে একটি নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন। তা না হলে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে বসে আছে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, সংস্কার কাজটা কত দ্রুত করবেন তার ওপর নির্ভর করবে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসন উপযুক্ত হলো কিনা। রাষ্ট্রের পরিবেশটা কেমন হবে এটা ছয় মাসেও হতে পারে আবার বছরও লাগতে পারে। এজন্য সময় নির্ধারণ নিয়ে ছটফট করার দরকার নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলবো, যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, প্রশাসন সংস্কার করুন। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে এই দলীয়করণ মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও জ্বরাক্রান্ত থেকে মুক্ত করুন। তাহলেই দেশের জনগণ বুঝতে পারবে নির্বাচনের সঠিক সময় হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের লোকদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, তাদের কথা থেকে ফ্যাসিবাদের গন্ধ এখনো বের হয়। এই প্রশাসন, এদেরকে এখানে রাখবেন, আর এইভাবে আবার আপনি নির্বাচন দিলে, ১৪, ১৮ এবং ২৪ সালের মতোই নির্বাচন হবে।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়েছে, একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করছেন। রাষ্ট্র সংস্কারে আপনারা হাত দিয়েছেন। আপনারা তো এসেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আপনারা তো দেশ শাসন করতে আসেননি। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশে তৈরি করতে রাষ্ট্রের যে-সব অঙ্গগুলো সংস্কার করা লাগে, আপনি করুন।

তিনি বলেন, এগুলোর সংস্কার কাজে বেশি সময় নেওয়া যাবে না। এসব সংস্কারে দীর্ঘসময় নিলে আবার ওই খুনের মাস্টারমাইন্ড ষড়যন্ত্রকারীরা সময় পেয়ে যাবে। অরাজকতা, নৈরাজ্য করবে। ৫ আগস্টের পরও বিভিন্নভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একের পর এক চেষ্টা করে যাচ্ছে ফ্যাসিস্টরা। তাদেরকে সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না। শহীদ শিক্ষার্থীদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মানিকগঞ্জ জেলা শাখার আমির হাফেজ মাওলানা মো. কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও অঞ্চল পরিচালক (ঢাকা উত্তর অঞ্চল) অধ্যক্ষ মুহাম্মদ উজ্জত উল্লাহ, ঢাকা উত্তর অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ দেলওয়ার হোসাইনসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সোহেল হোসেন/এএমকে