কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ঝরল তিন প্রাণ, তদন্ত কমিটি গঠন
গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। পিকনিকে আসা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রিসোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয় ও পল্লী বিদ্যুৎ তিন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা এবং অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে এ ঘটনায় গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে পুলিশ, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদেরও রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন তদন্ত কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
পিকনিকে আসা শিক্ষার্থীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পিকনিকে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন তারা। গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও আইটি বিভাগের মোট ৪৬০ জন শিক্ষার্থী ২ হাজার ২০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে পিকনিকের আয়োজন করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে গ্রামীণ আঞ্চলিক এক লেনে সড়কে, যেখানে মিনিবাস চলাই কঠিন সেখানে কীভাবে বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাস প্রবেশ করানো হলো? পিকনিক স্পট বুক করার আগে আঞ্চলিক এক লেন সড়কে ডাবল ডেকার বাস প্রবেশ করবে কিনা সেটি আগে থেকেই জানা দরকার ছিল। কিন্তু তারা এসব বিষয় চিন্তাতেই আনেননি। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষও বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিকনিক আয়োজন কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।
আরও পড়ুন
একপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের রিসোর্ট থেকে বের দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেখানে থাকা ইসলামিক ইউনিভাসিটি অফ টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, পল্লী বিদ্যুতের তারটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুলেছিল। আমরা খুব ঝুঁকির মধ্যে ছিলাম। আজ পল্লী বিদ্যুৎ যদি তারটি খোলা না রেখে কভার তার ব্যবহার করতো তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না।
এদিকে উপজেলার এক গ্রামীণ পরিবেশে মাটির মায়া রিসোর্টটির অবস্থান। রিসোর্ট বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই। স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বলেন, দিনের পাশাপাশি রাতেও রিসোর্টটিতে উচ্চ শব্দে চলতো গান-বাজনা। আমরা সেখানের শব্দে অতিষ্ঠ। এছাড়াও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগও আছে রিসোর্টির বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের বক্তব্য দেয়নি। এ বিষয়ে জানতে রিসোর্টটির ব্যবস্থাপক মাসুদের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কারণে তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঘটনার পরপরই শ্রীপুরের স্থানীয় প্রশাসন, থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
শিহাব খান/এফআরএস