ভূমিহীনদের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘরের মালিক একজনই। তার মধ্যে তিনটিতে লাগানো আছে এয়ার কন্ডিশন (এসি), মেঝেতে আছে টাইলস। ঘটনাটি আশ্চর্যজনক হলেও এমন চিত্রের দেখা মিলেছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

অভিযোগ উঠেছে মধুপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭২ শতক জমির ওপর করা ২২টি ঘরের মধ্যে ছয়টি দখল করে রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী আলতাব হোসেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব ঘর হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘরগুলোর মধ্যে দুটি ব্যবহার করছেন আলতাব হোসেনের দুই স্ত্রী, দুটি তার শ্যালিকা চায়না বেগম, অপর দুটি ব্যবহার করছেন তার ভাইপোর স্ত্রী শিউলী বেগম। শুধু ঘর দখলই নয়, সরকারি ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৫টি ঘর থেকে ২৫০ টাকা করে নেওয়ারও অভিযোগ আছে আলতাবের বিরুদ্ধে।

সাবিনা বেগম ও রিনা বেগম নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ঘর পাওয়ার পর আলতাব হোসেন নিজে এসি বসিয়ে নিয়েছেন। ওই ঘরে টাইলস্ও বসিয়েছেন তিনি। সরকার থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১৫টি ঘর থেকে ২৫০ টাকা করে তুলেছেন। কিন্তু আমরা কেউ এখনো কোনো টাকা পাইনি।

স্থানীয়রা বলছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের এই জায়গায় আগে কাছারি বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। সেখানে পতিত সরকার আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় জায়গাটি দখল করে কবলা রেজিস্ট্রি করেন আলতাব হোসেন। পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয় এই জমি।

হাদিউজ্জামান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক জোর খাটিয়ে আলতাব হোসেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘর দখলে নেন। নিজের রাজনৈতিক কোনো নির্দিষ্ট দল বা পদ পদবি না থাকলেও যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, সেই দলেরই প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করেন আলতাব।

হরিহরনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মনসুর আলী বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগসাজশে এই ঘরগুলো দখলে নেয় আলতাব হোসেন।

এদিকে ঘর আশ্রয়ণ প্রকল্পের হলেও জমি নিজের বলে দাবি করেছেন আলতাব হোসেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বড় ছেলে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখান থেকে কিস্তিতে তিনটি এসি কিনে লাগিয়েছি। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কীভাবে পেলেন সে বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি আলতাব।

হরিহরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বিশ্বাস বলেন, আলতাবকে একাধিকবার নোটিশ করা হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। আমি উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।

এ বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়াজ মাখদুম বলেন, ঘটনার তদন্ত করে নীতিমালা ভঙ্গের সত্যতা পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ্যান্টনি দাস অপু/এফআরএস