প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়লেও সেবার মানে পিছিয়ে রংপুর অঞ্চল
‘গর্ভকালীন সেবা ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবসেবার হার বাড়লেও সেবার গুণগত মানের দিক থেকে জাতীয় সূচকে রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা এখনো অনেক পিছিয়ে। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সিজারিয়ান ডেলিভারি ও অদক্ষ ব্যক্তি দ্বারা ডেলিভারির প্রবণতা, বাল্যবিয়ের প্রকোপ, মা ও নবজাতকের সেবা সম্পর্কে ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে অজ্ঞতাসহ কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থাও নাজুক।’
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে বগুড়ার মম ইন হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘মাতৃত্ব এবং নবজাতকের যত্নের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ: প্রমাণ, চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান’ শীর্ষক সেমিনারের সমাপনী দিনে উত্থাপিত গবেষণাপত্রের আলোচনা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি’র (কেওআইসিএ) অর্থায়নে ও সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তায় এবং আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত ‘জননী প্রকল্প’ মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্য (এমএনএইচ) সেবার উন্নয়নে পরিচালিত চারটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনে দুই দিনব্যাপী (২০ ও ২১ নভেম্বর) এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে রংপুর বিভাগের রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা এবং উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নৃতত্ত্ববিদ, গবেষক, উন্নয়ন সহযোগী এবং অন্যান্য অংশীদারগণ অংশগ্রহণ করেন। তারা মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করতে গবেষণার ফলাফল এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করেন।
সেমিনারে জননী প্রকল্পের কর্ম এলাকায় হওয়া চারটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। দুই দিনব্যাপী এ সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন, প্যানেল আলোচনা এবং উন্মুক্ত মতামত গ্রহণ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা গবেষণার ফলাফলগুলোকে জাতীয় নীতি এবং স্থানীয় পর্যায়ে প্রয়োগের সঙ্গে সংযুক্ত করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন, যা মা এবং নবজাতকের জন্য একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
সেমিনারে আগত অতিথি ও বিভিন্ন সেশনের অংশগ্রহণকারী বক্তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি, সিজারিয়ান ডেলিভারি ও বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যম স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করার নিশ্চিতের সুপারিশ করেন। একইসঙ্গে সরকারের ২০৩০ সালের মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সূচকের যে লক্ষ্যমাত্রা সেগুলো জননী প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৭ এর মধ্যে অর্জনের আশা ব্যক্ত করা হয়।
সেমিনারে অন্যান্যদের মধ্যে সম্মানিত অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগের স্থানীয় সরকার পরিচালক মো. আবু জাফর ও রংপুর বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা পরিচালক দেওয়ান মোর্শেদ কামাল। সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন ডিরেক্টর ড. গোলাম মোদাব্বির সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারের শুরুতে জননী প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. উজ্জ্বল কুমার রায় প্রকল্প ও দুই দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্দেশ্যে ও কার্যক্রম সম্পর্কে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারি বিভাগ এবং উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বিদ্যমান ঘাটতিগুলো পূরণ এবং স্বাস্থ্যসেবার টেকসই মান উন্নয়নে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ