পদ্মা সেতু প্রকল্পের ১১০ কোটি টাকায় নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধে ধস
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে। এছাড়াও নদী ভাঙনে পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একটি জামে মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, রাতের আঁধারে নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এই পরিণতি হয়েছে।
সম্প্রতি এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতুর অদূরবর্তী পাইনপাড়া এলাকার পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। গত ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে কংক্রিটের সিসিব্লকসমূহ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও এলাকাটির আশপাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। হঠাৎ পদ্মা নদীতে এমন ভাঙন শুরু হলে পাইনপাড়া আহম্মদ মাঝি কান্দি গ্রামের মফিজুল উলূম জামে মসজিদটি ভাঙনের কবলে পড়ে।
এছাড়াও এর আগে গত ৫ অক্টোবর পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করা হচ্ছে।
পদ্মা নদী থেকে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ধসে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে নদী পাড়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ)। গত ৩০ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারিভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে বাঁধটি রক্ষায় কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বাঁধটি নির্মাণের পর থেকে এলাকার মানুষ ভেবেছিলেন তারা নদী ভাঙন থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। তবে একটি চক্র রাতের আঁধারে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় বাঁধ ধসে পড়েছে। ইতোমধ্যে মসজিদ ও স্কুল নদীতে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো এলাকা নদীতে চলে যাবে। আমরা চাই দ্রুত বাঁধটি সংস্কার করা হোক।
১৯৭০ সালে নির্মিত ৫২ নং পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সম্প্রতি নদীতে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাদুল বলে, খোলা আকাশের নিচে আমাদের ক্লাস করতে কষ্ট হয়। শীতের সময় নদী পাড়ে অনেক ঠাণ্ডা থাকে। এ জন্য ঠিকমতো ক্লাসও হয় না, পড়তেও পারি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা স্কুলের নতুন ভবন চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম মিয়া বলেন, নদী ভাঙনের কবলে পরে বিদ্যালয়ের ভবনটি ধসে পড়েছে। এরপর থেকে বাধ্য হয়ে নদী পাড় হয়ে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদান করতে হচ্ছে। ভবন বিলীন হওয়ায় স্কুলের ১২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই স্কুলে আসতে চায় না।
আরও পড়ুন
বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৩ নভেম্বর থেকে পদ্মা নদীতে আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করে আমরা জানতে পেরেছি, পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধটি করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। ভাঙন এলাকাটির পাশেই আমাদের একটি প্রকল্প চলছে। আমরা চেয়েছিলাম, পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধটির রক্ষণাবেক্ষণও করি। কিন্তু সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় আমরা কাজ করতে পারিনি। এখন আমরা অনুমতি পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দসহ অনুমতি পেলে আমরা দ্রুত বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করব।
সাইফ রুদাদ/এফআরএস