জুলাই বিপ্লব আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মো. ইব্রাহিম হোসেন (১৯) নামে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় করা মামলায় এক ছাত্রদল নেতাকে আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে ছাত্রদলসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এর আগে, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে আহত মো. ইব্রাহিম হোসেন নিজেই বাদী হয়ে ৮৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি (যার নম্বর-১৫) করেন। এই মামলার ৬৮ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ছাত্রদল নেতা মো. কাদিরকে (৩০)।

মো. কাদির সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকার মৃত সিরাজের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন।

মামলায় শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান (৩৭), ভাতিজা আজমেরি ওসমান (৪৫), মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম (৫৬), সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান (৭৮), সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া (৬২) ও থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির (৫৫) নাম আছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২০ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডের ভূমিপল্লী এলাকার বিদ্যুৎ অফিসের সামনে আন্দোলন চলাকালীন বাদী ইব্রাহিমসহ বহু মানুষ সড়কে বিক্ষোভ করছিলেন। তখন শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমানসহ মামলায় উল্লিখিত আসামিরা একত্র হয়ে তাদের উদ্দেশ্য করে গুলি করেন। একপর্যায়ে তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইব্রাহিমের ডান পায়ে ও কোমরে দুইটি গুলি লাগে। পরে ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করান।

এ ঘটনায় ছাত্রদল নেতাকে আসামি করায় মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলে তখন কাদির ছাত্রদলের রানিং কমিটিতে ছিল। ছাত্রদলের যেকোনো কর্মসূচিতে সবসময় সামনের সারিতে থাকতেন তিনি। আন্দোলন চলাকালে তিনি পুরোটা সময় ছাত্রদের পাশে ছিলেন। তিনি কিভাবে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামি হন? এতে আমি গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

মামলার আসামি হওয়ার বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. কাদির বলেন, মামলার এজাহারে আমার নাম দেখে আমি হতবাক। ছাত্রদলের সক্রিয় রাজনীতি করায় আওয়ামী লীগের আমলে অনেক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার আবারও মিথ্যা মামলার আসামি হতে হবে তা কখনো কল্পনাই করিনি। আমি আসলে এ নিয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

এ বিষয়ে মামলার বাদী মো. ইব্রাহিম হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন এবং একটু ফোন দেবেন বলে লাইন কেটে দেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, আমরা তো এজাহারকারী না। আমরা যদি চার্জশীটে তার নাম দেই তাহলে তিনি প্রশ্ন করতে পারবেন যে কেন আমরা তার নাম দিলাম। তদন্তে যদি তিনি নিরপরাধ লোক প্রমাণিত হয় এবং বৈষম্যবিরোধীর স্বপক্ষের শক্তির সহায়ক হন এক্ষেত্রে তার নাম বাদ যাবে। তাই নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এফআরএস