মানিকগঞ্জের ভাড়ারিয়া বাজারে সরকারি খাসজমিতে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণের অভিযোগ ও উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়ায় দোকান মালিক গ্রিস প্রবাসী সায়েম খানকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে ভাড়ারিয়া বাজার এলাকায় এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেন দোকান নির্মাণকারী সায়েম খানসহ তার পরিবার। নির্মাণের মালামাল সরিয়ে নিতে বললে সায়েম, তার মা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে যান। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সায়েমকে আটক করে সদর উপজেলার ভূমি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম।

অভিযানে হরিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহরিয়ার আশরাফ, মানিকগঞ্জের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর মেজর মিনহাজ ও সেনবাহিনীর একটি টিম, সদর থানা পুলিশ, আনসার সদস্য এবং ভাড়ারিয়া বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ীরাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহযোগিতা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাড়ারিয়া বাজারের সরকারি খাসজমি দখল করে ৮ থেকে ১০টি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে বিগত ২০২১ সালের দিকে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর খাসজমি উদ্ধারে তৎপর হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ওই সময় খাসজমিতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য দুইবার দোকান মালিকদের নোটিশ করে প্রশাসন। পরে ব্যবসায়ীরা আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে উচ্ছেদ অভিযান স্থবির হয়ে পড়ে। প্রায় দুই বছর আগে সরকারি খাসজমি দখল করে রাতারাতি দোকান নির্মাণ করেন গ্রিস প্রবাসী সায়েম খান। পরে ওই সময় ভাড়ারিয়া ইউপি ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মৌখিকভাবে বাধা দেন। কিন্তু নিষেধ অমান্য করেই দোকান নির্মাণ করা হয়।

আরও জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে আসেন প্রবাসী সায়েম খান। এরপর সুযোগ বুঝে ওই খাসজমি দখল করে অবৈধভাবে আবারও দোকান নির্মাণ শুরু করলে সরেজমিনে গিয়ে গত ২৪ অক্টোবর মৌখিকভাবে বাধা দেন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল আলম। ওই সময় দোকান নির্মাণ বন্ধ করে মালামাল সরিয়ে নিতে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সায়েম দোকান নির্মাণ করেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, ভাড়ারিয়া বাজার হরিরামপুর আর সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত। সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া মৌজায় ৩০০২নং দাগে সরকারি খাসজমি দখল করে ৮ থেকে ১০টি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছেন দখলদাররা। তাদের নামের তালিকা এসিল্যান্ড ও জেলা প্রশাসক অফিসে দেওয়া আছে। তবে ভাড়ারিয়া ইউপি ভূমি অফিসের নায়েব বাধা দিলেও তা মানেননি দখলদাররা। নতুন করে সায়েম খান নামের এক প্রবাসী খাসজমি দখল করে দোকান নির্মাণ করছেন। পরে মৌখিকভাবে নিষেধ করলে তারা নায়েবের কথা কর্ণপাত না করেই দোকান নির্মাণ করছেন। আমরা ব্যবসায়ী চাই যাতে কেউ সরকারি জমি দখল করতে না পারে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল আলম বলেন, সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া বাজারে সরকারি খাসজমি দখল করে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করেছেন গ্রিস প্রবাসী দাবি করা সায়েম খান নামের এক ব্যক্তি। এর আগেও গত ২৪ অক্টোবর আমি সরেজমিনে তাকে মৌখিকভাবে দোকান নির্মাণ না করতে বলে আসি এবং মালামাল সরিয়ে নিতে বলি। কিন্তু তিনি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পুনরায় দোকান নির্মাণ করেন। সরকারি খাসজমি রক্ষার্থে আজকে সেনাবাহিনীর একটি টিম ও সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সরকারি কাজে বাধা দেন সায়েম, তার মা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার।

তিনি আরও বলেন, সরকারি ভূমি রক্ষার্থে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়ায় তাকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সায়েম খানকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ওই বাজারের অবৈধভাবে খাসজমি দখলকারীরা আদালতের মাধ্যমে স্থগিতাদেশ করে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আদালতের স্থগিতাদেশ বাতিল করে সরকারি খাসজমি উদ্ধারের লক্ষ্যে সব দোকান উচ্ছেদ করা হবে।

সোহেল হোসেন/এমজেইউ