ডিবির অভিযানের পর যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানের পর জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফয়সাল খান শুভর (৩০) মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার আজিজুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ফয়সালের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি আছে কি না সেই লক্ষ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রামই অ্যান্ড অপস) মো. শামীম হোসেনকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
এসপি আরও জানান, এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত এই ঘটনার সঠিক রহস্য উন্মোচিত হবে।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে প্রেমঘটিত ঘটনায় নিহত ফয়সাল ও তার চার স্বজনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। কিন্তু মামলা রেকর্ড হওয়ার আগেই এদিন রাত ৯টা ৩৮ মিনিটে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযানে যায় ডিবি।
অভিযানে ডিবির সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠায় পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিবির ১৮ মিনিটের অভিযান শেষে রাত ৯টা ৫৬ মিনিটে বেরিয়ে যাওয়ার পর পাঁচতলা ভবনের নিচ থেকে ফয়সালকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এরপর গত শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার বিচার দাবিতে গতকাল (১৮ নভেম্বর) জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
জানা যায়, নিহত ফয়সাল জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। তিনি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউস রোডে বড় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। এরই মধ্যে ফয়সালের সঙ্গে প্রায় চার বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল তার এলাকার এক তরুণীর। গত ১৫ নভেম্বর তরুণীর বিয়ে ঠিক হওয়ায় ফয়সাল বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ জন্য তরুণীর বাবা থানা ও ডিবিতে পর্নোগ্রাফি আইনে অভিযোগ দেন। কিন্তু মামলা রেকর্ড হওয়ার আগেই ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযানে যায় ডিবি।
এদিকে ছেলে মৃত্যুর ঘটনায় গত ১২ নভেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় ফয়সালের বাবা সেলিম খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে ফয়সালকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। মামলায় তরুণীর বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী ফয়সালের বাবা সেলিম খান বলেন, আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও মেয়ের পরিবারের লোকজন আমার এক ভাইয়ের ওপর আক্রমণ করতে চেয়েছিল। যদি হত্যার উদ্দেশ্য না হতো তাহলে পুলিশের অভিযানে কেন অন্য লোক যাবে?
ঘটনার কয়েক দিন হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরছে না বলেও অভিযোগ বাদীর।
মো. আমান উল্লাহ আকন্দ/এমজেইউ