নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
ওএমআর কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মাসুদ রানার যত অনিয়ম
ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. মাসুদ রানার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় তদন্ত শুরু হওয়ায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে মাসুদ রানার চাঞ্চল্যকর অনিয়মের নানা তথ্য। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদালয় সূত্রে জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করার পর তার বাসভবন থেকে উদ্ধার করা হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অব্যবহৃত ওএমআর, নিয়োগ পরীক্ষার খাতা, সংসদ সদস্যদের ডিও, প্রকল্প বিল-ভাউচার, নিয়োগ সংক্রান্তসহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নথি। তার এসব অনিয়মের ঘটনায় অন্যতম সহযোগী হিসেবে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মাসুদ রানার নাম।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওএমআর কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, পরীক্ষার পর আমরা ওএমআর প্যাকেজিং করছিলাম। এ সময় ওএমআর কমিটির সদস্য সচিব মাসুদ রানা এসে বলেন- ‘ভিসি স্যার কিছু ওএমআর চেয়েছেন।’ কারণ জানতে চাই তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের হাতে কিছু ওএমআর নিয়ে যান।
বিতর্কিত সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সেও মাসুদ রানা
দুর্নীতিবাজ সাবেক উপাচার্যের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন মাসুদ রানা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একজন শিক্ষককে দিয়ে এমবিএ কোর্স পরিচালনা দুর্নীতিবাজদের মদদ দেওয়ার সামিল। এখানেও ভর্তি বাণিজ্যের গুঞ্জন রয়েছে।
সর্বনিম্ন সিজিপিএ নিয়ে শিক্ষক হন মাসুদ রানা
বিশ্ববিদালয় সূত্রে জানা যায়, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মাসুদ রানা শিক্ষাজীবনে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন মানবিক শাখায়। কিন্তু তিনি নিয়োগ পেয়েছেন বাণিজ্য বিভাগে। তার অনার্সের সিজিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট) ৩ দশমিক ৩৩। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে তৎকালীন উপাচার্যের অনৈতিক সহযোগিতায় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মাসুদ রানা এই নিয়োগ বাগিয়ে নিয়েছেন। এসব ঘটনা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর।
সহকারী অধ্যাপক পদেও জালিয়াতির অভিযোগ
অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক মাসুদ রানা প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার সময় তার গবেষনাপত্রে রেয়াদ নেন। কিন্তু রেয়াদ নেওয়া তার সর্বশেষ আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ সালের জুন সংখ্যায়। সে অনুযায়ী তার সহকারী অধ্যাপক হওয়ার কথা ২০১৪ সালের ৩০ জুন থেকে। কিন্তু তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন ২০১৪ সালের ২৩ মে থেকে। এতে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
অভিযোগ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানার বক্তব্য
এসব অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মাসুদ রানা বলেন, উপাচার্যের নির্দেশে আমি হাতে করে কোনো ওএমআর নেইনি। যদি আমি নিয়ে থাকি তাহলে যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তারা কেন আমাকে বাধা দেননি? সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সে আমি পরিচালক হলেও এটি আমার একক নিয়ন্ত্রণে নেই। সুতরাং এক্ষেত্রে ভর্তি বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। আর আমার নিয়োগ এবং সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে অভিযোগ মিথ্যা। বিজ্ঞপ্তি মেনেই আবেদন করে আমি নিয়োগ পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হয়েছি।
এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর