জুনে হৃদরোগে বিএনপি নেতার মৃত্যু, আগস্টে হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই রহস্যের জট খুলতে আদালতের নির্দেশে মরদেহটি কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মামুনের উপস্থিতিতে বাবুল মিয়ার মরদহটি উত্তোলন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি নিশ্চিত করে আড়াইহাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মানুনের উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নারায়ণগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী নুরুল আমিন উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সচেতন নাগরিক হিসেবে অংশ নেন বাবুল মিয়া। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাবুল মিয়াকে কালীবাড়ি বাজার থেকে তুলে নিয়ে দুপ্তারা ঈদগাহ মাঠে হত্যা করা হয়। এই মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও আসামি করা হয়েছে।
এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের ফকির নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির আক্তারুজ্জামান ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামান নিয়াজ এবং ফকির ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির কামরুজ্জামান নাহিদকে হত্যাকাণ্ডে অর্থ যোগানদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ আছে অর্থ ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ইশারায় তাদের আসামি করা হয়।
তবে বাবুল মিয়ার মৃত্যু সনদ ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৩ জুন তিনি মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে বিএনপির মহাসচিব তখন শোকবার্তাও পাঠিয়েছিলেন বলে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন।
নিহত বাবুলের পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ছোট ভাই নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বাবুলকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে তারা। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বাবুল। এরপর ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এছাড়া এই দিনই উপজেলার গিরদা-পশ্চিমপাড়া-চৌধুরীপাড়া কবরস্থানে বিএনপি নেতা বাবুল মিয়ার মরদেহ দাফন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক সেলিম মিয়া।
অন্যদিকে ৩ জুন ৪৯ বছর বয়সী বাবুল মিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে মৃত্যু সনদ দিয়েছে রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় অবস্থিত ডিকেএমসি হাসপাতাল লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। বাবুলের সেই মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা হয়, গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বাবুলের পরিবার এই সাজানো মামলা করতে রাজি না হওয়ায় পরিবারটির কাউকেই সেই মামলায় সাক্ষী করা হয়নি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী নুরুল আমিনের কছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবুলকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এটা সত্য। এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে। তাকে কুপিয়ে জখম করলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকতে পারে। তবে সন্ত্রাসী হামলা করেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
৩ জুন হার্ট অ্যাটাকে বাবুলের মৃত্যু হলেও দুই মাস পর ৪ আগস্ট তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলায় কেন উল্লেখ করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলায় মৃত্যুর তারিখের বিষয়ে ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে সেটা খোঁজখবর নিয়ে সংশোধন করা হবে।
প্রসঙ্গত, আড়াইহাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বাবুল মিয়াকে হত্যার অভিযোগ এনে ২২ আগস্ট রাতে ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও স্থানীয় নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুসহ ১৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরএআর