উপদেষ্টা চেয়ে তিন দিনের আল্টিমেটাম, নয়তো ‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’
আগামী তিন দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উত্তরবঙ্গ থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে রংপুরবাসী। অন্যথায় ২১ নভেম্বর থেকে উত্তরবঙ্গ ব্লকেড কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা থেকে পুরো রংপুর-রাজশাহী বিভাগকে বিচ্ছিন্নের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে ছাত্র-জনতার ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা জানান, ১৬ জুলাই আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পর দেশে যে বিপ্লব ঘটে, তাতে সরকার পতনের পর ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়। সেখানে উত্তরবঙ্গ থেকে একজনকেও উপদেষ্টা নিয়োগ হয়নি। পরবর্তীতে আরও কয়েক দফায় উপদেষ্টা নিয়োগ হলেও রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের কেউ স্থান পাননি। এ নিয়ে যুগ যুগ ধরে বৈষম্যের শিকার ও উন্নয়ন বঞ্চিত উত্তরের মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন
ছাত্র নেতারা আরও বলেন, দাবি আদায়ে গত ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং মহাসড়ক অবরোধসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। গতকাল শনিবার রংপুরে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা জানিয়েছে এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তার এ কথা জানার পর উত্তরবঙ্গের মানুষের মধ্যে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
তিন দিনের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’ কর্মসূচিসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিরা বলেন, তিন দিনের মধ্যে উপদেষ্টা নিয়োগ না হলে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় ধরনের অবরোধ (ব্লকেড) কর্মসূচি পালন করা হবে।
উত্তরবঙ্গ থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবির কারণ হিসেবে তারা বলেন, রংপুর অঞ্চল অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও তিস্তা পরিকল্পনার মতো কাঙ্ক্ষিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে বঞ্চিত। এ অঞ্চলের ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিত্ব করতে উত্তরবঙ্গ থেকে সরকারে উপদেষ্টা রাখাটা প্রত্যেকটা মানুষের দাবি। কারণ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রংপুর অঞ্চল উন্নয়ন বঞ্চিত, তাই এখানে উপদেষ্টা নিয়োগ জরুরি। রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের উন্নয়ন এবং খাদ্য উৎপাদনে অবদান থাকা সত্ত্বেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। তিস্তা নদী সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উত্তরবঙ্গের উপদেষ্টার প্রয়োজন। রংপুরের উন্নয়ন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণেও উপদেষ্টা নিয়োগ অপরিহার্য।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলা সমন্বয়ক ইয়াসির আরাফাত, আলমগীর নয়নসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
তারা দ্রুত উপদেষ্টা নিয়োগের মাধ্যমে রংপুর ও উত্তরবঙ্গের মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে সরকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) রংপুরে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ জানিয়েছেন উত্তরাঞ্চল থেকে সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।
রংপুর অঞ্চল বা উত্তরবঙ্গ থেকে উপদেষ্টা নিয়োগে সরকারের মধ্যে আলোচনা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা আঞ্চলিকভাবে চিন্তা করবেন না। এটা যদি করেন, তাহলে আপনারা নিজেদের ছোট করে ফেলবেন। আমরা দেশ নিয়ে ভাবছি। অঞ্চল ভিত্তিক ভাবনাগুলো আমাদের সংকুচিত করে দেয়, সংকীর্ণ করে দেয়। এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
উপদেষ্টা নিয়োগে বিতর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সমালোচনা করুন। আমরা সেগুলো শুধরিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। দেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যাদের মনে করেছেন তাদেরকেই উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত করা দরকার, তাদের যুক্ত করা হয়েছে। কাউকে ছোট বা বড় করে নয়।
চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে অনেক উপদেষ্টা নিয়োগ হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, এটা কোনো বৈষম্য নয়। এভাবে দেখা বন্ধ করুন। আমি একটা কথা বলি আপনাদের, বিগত সময়ে ফরিদপুর থেকে কী পরিমাণ লোক এসেছে, ভরে গিয়েছিল না। আমরা সেই আঞ্চলিকতায় বিশ্বাস করি না। এই এলাকায় যতখানি, মেধা, শ্রম ও অর্থ দেব, তা অন্য এলাকাতেও দেব।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসএ