শহীদ ভাইদের নিয়ে মামলা বাণিজ্য চলবে না : সারজিস আলম
জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের নিয়ে মামলা বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় ধান্দাবাজি শুরু করে দিয়েছি। এই মানসিকতা থেকে আমাদের বের হতে হবে। আমরা পুলিশকে আবারও বলেছি এই যে ভুয়া মামলা হচ্ছে আমাদের সকলের এগুলো থেকে বের হতে হবে। শুধু রংপুরে নয় বাংলাদেশের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে কঠোরভাবে বলতে চাই, আমাদের শহীদ ভাইদেরকে নিয়ে বাণিজ্য চলবে না।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সারজিস আলম এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত রংপুর বিভাগের শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, কাউকে কোনো মামলায় নাম দিয়েছে মানেই গ্রেপ্তার করা যাবে না। টাকা দিয়ে নাম দিচ্ছে আবার টাকা দিয়ে নাম কাটাচ্ছে, এই ব্যবসা সামগ্রিকভাবে বন্ধ করতে হবে। যারা এটা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেই সম্পৃক্ত হোক যদি মনে হয় এটা ষড়যন্ত্রমূলক, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে কাজ করলে তারা এটা করতে পারবে না।
উত্তরবঙ্গ থেকে সরকারে উপদেষ্টা না রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাদেরকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তারা কতটুকু যোগ্য? তিন বিভাগে কী একজনও উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য নেই? আমাদের কোয়ালিটি একটা প্যারামিটার হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার হচ্ছে ২০২৪ এর আন্দোলনে কে সঙ্গে থেকেছে আর কে নীরব ছিল, কে বিপক্ষে ছিল। যার অংশগ্রহণ সরাসরি ছিল, যারা নির্যাতিত এবং জনমানুষের কথা বলে এসছে তার প্রাধান্য সবার আগে হওয়া উচিত। যে মানুষটা সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলেও সাহস যুগিয়েছে তাকেই দেওয়া উচিত।
মোস্তফা সরয়ার ফারকী উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়ে সারজিম বলেন, এই আন্দোলনে ফারুকী কোন সময়ে ছিলো? ৩৬ জুলাই সরকারের বিপক্ষে গিয়ে তিনি ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল? কখনোই নয়। তিনি তার সময়ে ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়ার জন্য যেভাবে তোষামোদি করার দরকার সেটি করেছে। এই ফারুকীরা কীভাবে এই উপদেষ্টা পরিষদে আসে? আমরা সেদিনই বিরোধিতা করেছি এ রকম কঠিন সময় নীরব থাকা এবং গা বাঁচিয়ে চলা লোকজনকে উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চাই না। যে আন্দোলন করেছিল বা ধারণ করছিল তাদেরকে দিয়েই উপদেষ্টা পরিষদ গঠন হওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে উপদেষ্টা করার দাবি উঠেছে। এ নিয়ে রংপুরে ছাত্র-জনতা আন্দোলনও করছে। বিষয়টি নিয়ে সারজিস বলেন, আখতার ভাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালযয়ের বড় ভাই। এই আন্দোলনে পুরো সময়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ছিলেন। পুরো সময়ে তিনি এই আন্দোলনে ছিলেন। তিনি প্রত্যেক দিন আমাদের সঙ্গে মঞ্চের সামনে বা মঞ্চের পিছনে ছিলেন, কিন্তু ছিলেন। কখনোই আমাদেরকে ছাড়েননি আমাদের অগ্রজ হিসেবে। উত্তরবঙ্গের একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ দিতে হবে। সেই জায়গা থেকে আখতার ভাইকে দিতে হলে আখতার ভাই বা অন্য কাউকে যদি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্পেশালিস্ট মনে হয় এবং যদি মনে হয় যে ফ্যাসিস্টের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন তার স্পিড ও পার্সোনালিটি আছে, পার্সোনাল ডিগনিটি আছে এবং অন্য যে কেউ হয় তার ওই যোগ্যতা আছে তাকেই নেওয়া যাবে। দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য যাকে উপযুক্ত মনে হবে ভালো মনে হবে তাকেই নেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা জীবনের মায়া করিনি। যারা রাজপথে ছিলাম, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম। যেকোনো মুহূর্তে ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের বুলেট আঘাত করতে পারতো।
যদি সারজিসকে উপদেষ্টা করা হয়, তাহলে কেমন হবে বা সেটি নিয়ে ভাবনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমাকে উপদেষ্টা তৈরি করার ব্যাপারে স্পষ্ট বলতে চাই, যে মানুষটি যেকোনো সময় জীবন দিতে প্রস্তুত ছিল, এখনো আছো ভবিষ্যতেও থাকবে। আমাকে যদি দেশের মানুষের জন্য কোনো একটি দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেটি নিতে কোনো পিছুটান থাকবে না। যে ক্ষমতা মানুষকে দূরে সরায় সেই ক্ষমতা আমি আমরা চাই না।
এর আগে শিল্পকলা একাডেমি হল রুমে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টে রংপুর বিভাগের শহীদ ৬৬ পরিবারের মধ্যে ৪৪ জনকে আর্থিক সহযোগিতার চেক হস্তান্তর করা হয়। বাকিদের পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ প্রমুখ।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর