বাসায় ডিবি পুলিশের অভিযান, যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু
ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এ সময় পাঁচতলার ছাদ থেকে রহস্যজনকভাবে পড়ে ফয়সাল খান শুভ (৩০) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হন। তাকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
বিজ্ঞাপন
নিহত ফয়সাল খান শুভ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডের ৫৫/৬ দুলাভাইয়ের বাসায় বসবাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
নিহত ফয়সালের পরিবার জানায়, ফয়সাল খান শুভ’র সঙ্গে একই গ্রামের সুলতান আহমেদ খানের মেয়ে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ ৪ বছর চলে দুজনের প্রেম। সম্প্রতি সাদিয়া তাহসিনের ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে এসএএস সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে অডিটর পদে চাকরি হয়। সেখান থেকে সাদিয়া তাহসিন এক ট্রেনিং গিয়ে তার ব্যাচমেটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ফয়সাল খান শুভর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
এরই মাঝে সাদিয়া তাহসিনের সঙ্গে তার ব্যাচমেটের বিয়ে ঠিক হয়। আজ শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি ফয়সাল জানতে পেরে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমিকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাদের চার বছরের সম্পর্কের কথা জানান ও কিছু ছবি-ভিডিও পাঠান। পরে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমিক তাকে বিষয়টি জানালে পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হয়। এমতাবস্থায় সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ খান গত ১ নভেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ফয়সাল খান শুভসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে পর্নোগ্রাফি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ঘটনার পর গত ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিবি পুলিশ নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডের ৫৫/৬ শুভর দুলাভাইয়ের বাসায় অভিযানে যায় ডিবি পুলিশ। অভিযানের সময় ডিবি পুলিশের সঙ্গে সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ খান এবং সাদিয়ার দুই ভাই আসিফ রহমান খান অপু ও আহনাফ আব্দুল্লাহ খান অনির্বাণ ছিলেন। ডিবি পুলিশ বাসায় ঢুকতে চাইলে নিহত ফয়সালের দুলাভাই মোহসিন কলাপসিবল গেট খুলে দিলে পুলিশ বাসার দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায়। তখন ফয়সালকে বাসার দ্বিতীয় তলায় খুঁজে না পেয়ে সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ খান এবং তার দুই ছেলে আসিফ রহমান খান অপু ও আহনাফ আব্দুল্লাহ খান অনির্বাণ বাসার ছাদে উঠে ফয়সাল খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রায় ৬০ ফুট উপর ধাক্কা দিয়ে নিচে মাটিতে ফেলে দেন। পরে সুলতান আহমেদ খান ও তার দুই ছেলে ডিবি পুলিশের সঙ্গে বের হয়ে আসেন। এর প্রায় ১৫ মিনিট পর প্রতিবেশী রিপন ডাক-চিৎকার করে বলতে থাকেন, কে যেন মাটিতে পড়ে আছে।
রিপনের চিৎকার শুনে ফয়সালের দুলাভাই মোহসিন ও বোন সুমি নিচে গিয়ে ফয়সালকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার সকালে ফয়সাল মারা যান।
এই বিষয়ে জানতে সাদিয়া তাহসিনের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা পলাতক থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে বাসায় গিয়েছি। আমরা বাসায় গেলে ফয়সালের দুলাভাই গেট খুলে দিলে ভেতরে প্রবেশ করি। পরে তাকে না পেয়ে আমরা বের হয়ে চলে আসি। আপনার কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পারেন, বের হওয়ার সময় পুলিশের কোনো তাড়াহুড়ো ছিল না। ফয়সাল কীভাবে ছাদ থেকে পড়েছে নাকি অন্য কিছু বিষয়টি আমার জানা নেই।
এটি একটি দুর্ঘটনা বলে দাবি করেন ওসি মো. শহিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফয়সালের মরদেহ ঢাকায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা কী তা জানা যাবে। এর আগে কিছু বলা যাবে না।
মো. আমান উল্লাহ আকন্দ/এমজেইউ