সেবার মান বেড়েছে মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের
পাসপোর্ট-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা পেতে প্রতিদিন মাগুরা জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতশত নারী-পুরুষ আসেন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। সেবা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রায় বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থীর। দালাল-হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় যেন পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা চিত্র।
তবে বর্তমানে মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। এখন পাসপোর্ট করতে এসে কেউ বিরক্তি নিয়ে ফিরে যান না বলে জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
কারণ হিসেবে শ্রীপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. আশফাকুল আজম, রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে জানান, পাসপোর্ট করতে এসে কোনো ধরনের ভোগান্তি হলেই তাৎক্ষণিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। আর তখনই সফটওয়্যারে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণের পর ডিজিটাল ক্লিকে তাৎক্ষণিক মিলছে সেবা। এর ফলে কমেছে ভোগান্তি।
এদিকে কর্মকর্তাদের এই সেবা মনোভাবের কারণে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট পাচ্ছেন আবেদনকারীরা।
গত আগস্ট মাস থেকে পাসপোর্ট আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে। অফিসের সবাই সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে এক দিনেই ফিঙ্গার দিয়ে আবেদনকারীরা বাসায় চলে যেতে পারছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে আনসার, অভিজ্ঞ জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে অফিসটি। সেবাপ্রার্থীরা পার্সপোট-সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় নিয়ে সরাসরি অফিসের প্রধান কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে কথা বলতে পারছেন। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে অফিসের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন নিরলস পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা থেকে পাসপোর্ট নবায়ন করতে আসা মো. আশফাকুল আজম নামে একজন বলেন, আমি অল্প সময়ের মধ্যে লাইন ধরে নিয়মকানুন মেনে পাসপোর্ট আবেদন, সহজে জমাদান ও ছবি তুলে খুব দ্রুত চলে আসলাম। এখানে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হতে হয় নাই।
মহম্মদপুর উপজেলা থেকে পাসপোর্ট করতে আসা সোমা সাহা বলেন, মেয়ের পাসপোর্ট করার জন্য ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছি। কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার হয়নি। তা ছাড়া অফিসের ভেতরে জনসাধারণের জন্য বসার ব্যবস্থা থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
সব্দালপুর ইউনিয়নের তারাউজিয়াল গ্রামের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার পাসপোর্ট হারিয়ে গেছিল। খুব চিন্তায় পড়ে গেছিলাম, কিন্তু অফিসের হেল্পডেক্স থেকে পরামর্শ নিয়ে থানায় জিডি করে তারপর সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করছি। অফিসের কর্মকর্তাদের ব্যবহার ও সার্বিক সহায়তায় আমি মুগ্ধ।
অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমান উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন চলতি বছরের ৯ জুন যোগদান করার পরই পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সমস্যা লাঘবে ও সেবার মান বৃদ্ধিতে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। জনদুর্ভোগ লাঘব এবং রাজস্ব আদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠানটিকে একটি সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কঠোর নির্দেশ দেন। তার কঠোর নির্দেশে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নড়েচড়ে বসেন। বিগত সময়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন অপেক্ষা করে নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যেত না পাসপোর্ট। সরকার নির্ধারিত ফি দিয়েও সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে গ্রাহকদের অসুবিধার অন্ত ছিল না। সুবিধাভোগী শ্রেণি ও অফিসের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে গ্রাহকদের হয়রানি বেড়েই চলছিল।
তবে মো. আফজাল হোসেন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস মাগুরার উপপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর পাল্টে গেছে চিত্র। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম রোধে কঠোরভাবে দমন করেন তিনি। এতে করে বেড়েছে সেবার মান। পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি কমায় স্বস্তি ফিরে জনমনে। যে কারণে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় তিনি যোগদানের পর থেকে বেড়েছে আবেদনকারীর সংখ্যা পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব অনেক বেড়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, সেবা প্রদানের মনোভাব নিয়েই এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে এসেছি। দালাল ও হয়রানির অভিযোগ আছে, ছিল, হয়ত থাকবেই। তবে আমি যোগদানের পর প্রতিটি কাজে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে সর্বত্রই দালালদের সিন্ডিকেট থাকে। দালালদের অপতৎপরতারোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ফলে অফিস চত্বরে এখন আর দালালদের বিচরণ না থাকায় আবেদনকারীরা নিজেরাই লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন জমা দিতে পারছেন। এতে কোনো ধরনের অতিরিক্ত অর্থ লেনদেনের সুযোগ বা কারণ নেই। অফিসের সবাই সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।চেষ্টা করছি সেবা নিতে আসা জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে।
এএমকে