বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ৯৮ দিন পর কবর থেকে সেই মিরাজুল ইসলাম মিরাজের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।

গতকাল লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচায় ইউনিয়নের আনছার খার পুকুর এলাকায় নিজ বাড়ির পাশের কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়। তিনি ওই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। 

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর ই আলম সিদ্দিকী লাশ উত্তোলনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের কর্মকর্তারাও তার সাথে ছিলেন। লাশ উত্তোলন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। 

জানা গেছে, স্থানীয় মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসি পাস করেন মিরাজ। সিএনজি চালক বাবার সাথে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকতেন তিনি। দনিয়া মডেল স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বিকাশ দোকানের কর্মচারী ছিলেন মিরাজ।  

গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে অন্যদের মতো যাত্রাবাড়ী থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেন মিরাজ। তার খালাত ভাই কারখানা শ্রমিক মাজেদুল ইসলামও তার সাথে যোগ দেন মিছিলে। সেখানে পুলিশের গুলিতে দুই ভাই মিরাজ ও মাজেদুল গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় মিরাজকে। অস্ত্রোপচার করে মিরাজের শরীর থেকে গুলি বের করা হলেও এর দুই দিন পর ৮ আগস্ট মারা যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। তার সাথে যাওয়া গুলিবিদ্ধ খালাত ভাই মাজেদুল ইসলাম চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। 

মিরাজের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপিকে প্রধান করে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২/৩ শত জনের বিরুদ্ধে ২৪ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা ( নং-১৭(৮) ২৪) দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের স্বার্থে মৃত মিরাজের ভিসেরা (ময়না তদন্ত) প্রতিবেদনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) কাওসার হোসেন। যার প্রেক্ষিতে ঢাকা সিএমএম আদালতে বিচারক ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক লাশ উত্তোলনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লালমনিরহাট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদেশ দেন। 

সেই আদেশে গতকাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিতিতে ৯৮ দিন পর কবর থেকে মিরাজের মরদেহ উত্তোলন করে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা যাত্রাবাড়ি থানার উপপরিদর্শক(এসআই) কাওসার হোসেন বলেন, মিরাজ হত্যা মামলায়এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ। মৃতের ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এরপর এ মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হবে। তারা তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন। 

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তাকে সহায়তা করতে মিরাজের কবরস্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠিয়েছে। 

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এনএফ