ঋণ না পেয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধর, ২ যুবদল কর্মীর নামে মামলা
ময়মনসিংহে যুবদলের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যাংক ব্যবস্থাপককে মারধর করে ভল্টের চাবি ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গৌরীপুর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, আবেদন করে ঋণ না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ৬ থেকে ৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল ওই এলাকায় কৃষি ব্যাংকের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানকে হঠাৎ পথে পেয়ে তাকে মারধর করে এ ঘটনা ঘটনায়।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও তিনজনকে আসামি করে গৌরীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এজাহারভুক্ত দুজন দুই লাখ টাকা করে ঋণ চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, মারধর ও চাবি ছিনতাই হওয়ায় বুধবার রাত থেকে ব্যাংকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত দুজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তবে তাদের পদ-পদবি নেই। ঘটনাটি জানার পর স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা চাপ প্রয়োগ করলে তারা লোক মারফত রাতেই লুট করা ব্যাগটি থানায় পৌঁছে দেন। তবে মূল অপরাধীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। বতর্মানে ওই চাবি পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এদিকে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. কামরুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ব্যাংকের ভল্টের চাবি ছিনতাই হওয়ায় জেলা কার্যালয়ের সংরক্ষিত চাবি এনে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
কৃষি ব্যাংক সোহাগী বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় ব্যাংকের কাজ শেষ করে মোটরসাইকেলে করে গৌরীপুর উপজেলার নিজ বাড়িতে ফিরছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গৌরীপুর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল দ্রুতগতিতে এসে আমার পথ আটকে ধরে। মোটরসাইকেলটিতে আরোহী ছিল তিনজন। তাদের সঙ্গে থাকা ছয় থেকে সাত সদস্যের ওই সংঘবদ্ধ দল আমাকে মারধর করে। এ সময় সঙ্গে থাকা ব্যাংকের একটি চাবি নিয়ে যায়।
মারধরে নেতৃত্ব দেওয়া দুই তরুণকে মাহাবুবুর রহমান চিনতে পেরেছেন বলে দাবি করেন। তারা হলেন ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী ইউনিয়নের দড়িবড়ভাগ গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে নাহিদ হাসান রাসেল (২৪) ও দরিবৃ গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আজিজুল হক (২২)।
তিনি বলেন, ওই দুই তরুণ এক সপ্তাহ আগে তাদের ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু ঋণের আবেদন যাচাই–বাছাই করে আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। কারণ, তাদের বাবার নামে খেলাপি ঋণ ছিল। পরে ওই দুই তরুণ আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন ঋণ দিতে। কিন্তু ঋণ দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল ও হুমকি দিয়ে ব্যাংক ত্যাগ করেন। এ কারণে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তারা আমার ওপর হামলা ও চাবি ছিনতাই করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নাহিদ হাসান ও আজিজুল হক স্থানীয় বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নুরুল কবীর বলেন, ‘যারা ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের আমি চিনি না। তারা কার সঙ্গে রাজনীতি করেন, পরিচয় কী, তা আমার জানা নেই। ওসি অনুরোধ করায় ব্যাগটি উদ্ধারে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যদি কিছু করে থাকে, কঠিন ব্যবস্থান নেন।’
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মাযহারুল আনোয়ার বলেন, ব্যাংক ঋণ না দেওয়ায় ব্যবস্থাপকের পথ আটকে ব্যাংকের চাবিসহ ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবকেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
আমান উল্লাহ আকন্দ/এমএ