ভরা মৌসুমেও খাঁ খাঁ করছে পর্যটনমুখর স্থানগুলো
পাহাড়, নদী ও ঝরনার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান জেলা। চোখজুড়ানো নিসর্গসৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর অনেক জায়গার কারণেও বান্দরবান একটি উল্লেখযোগ্য জেলা। বছরজুড়ে পর্যটকদের পদচারণে মুখর থাকে এ জেলার সবগুলো দর্শনীয় স্থান। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ জেলার পর্যটন স্থানগুলো এখন নীরব-নিস্তব্ধ। একসময়ের কোলাহলমুখর আকর্ষণীয় স্থানগুলো এখন পর্যটনের ভরা মৌসুমেও খাঁ খাঁ করছে।
মেঘলা, নিলাচল, শৈলপ্রভাত, চিম্বুক, নীলগিরি, রেমাক্রি, দেবতামকুমসহ সব কটি পর্যটন কেন্দ্র নিসর্গপ্রেমী পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট থাকে। যেকোনো ছুটিতে বা এই মৌসুমে হাজারো মানুষের পদভারে মুখর থাকে পর্যটন স্থানগুলো, সেখানে আজ সুনসান নীরবতা। কারণ, ৩১ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বান্দরবান জেলার সব পর্যটন স্পট।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন স্থানগুলোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাই পর্যটকেরা এ মুহূর্তে বিনোদনমুখর স্থানগুলোয় না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিধায় পর্যটকশূন্য পড়ে আছে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এ অঞ্চল।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা গেল, একপ্রকার জনমানবশূন্য কোলাহলপূর্ণ এলাকা। কোথাও কেউ নেই। বিশাল পর্যটন স্পট মেঘলার প্রধান গেটে ঝুলছে বড় তালা। মেঘলা প্রবেশের টিকিট কাউন্টারে ঝুলছে বন্ধের নোটিশ। কয়েকজন স্থানীয় কিশোর-কিশোরীকে আড্ডা দিতে দেখা গেছে তীব্র দাবদাহের মধ্যেই।
এদিকে বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন স্পট নিলাচল। অধিকাংশ সময় নিলাচলে হাজার হাজার পর্যটক থাকলেও এখন কোনো পর্যটক নেই, কোলাহল নেই। অন্যদিকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাতে কোনো পর্যটক সমাগম বা কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রম সংঘটিত না হয়, সে জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের টহল অব্যাহত রয়েছে নিয়মিত।
হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমলকান্তি দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বান্দরবানে পর্যটনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় বড় ধরনের একটা প্রভাব পড়েছে। গত বছরও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বছরও একই অবস্থা। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
ট্যুরিস্ট পুলিশ ইনচার্জ মো. আমিনুল হক বলেন, বান্দরবানের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কোনো সমাগম যাতে না ঘটাতে পারে, সে জন্য নিয়মিত টহল অব্যাহত রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ থাকার বিষয়টি না জেনে চলে আসেন। আমরা তাদের এ সময়ে না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করছি। বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতে কোনো মাদকসেবীর আড্ডা না হয় এবং কোনো ধরনের অপরাধ কার্যক্রম সংঘটিত না হয়, সে জন্য নিয়মিত আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল অব্যাহত আছে।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় গত ৩১ মার্চ থেকে বান্দরবানের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এরপর বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন নেই। লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা সবাইকে মেনে চলতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের নির্দেশনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রিজভী রাহাত/এনএ