‘পড়ালেখা কইরা ইঞ্জিনিয়ার হইতে চাইছিল সুমন’
‘রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার চালান সুমনের বাবা। ছেলে সুমন পড়ালেখা কইরা ইঞ্জিনিয়ার হইতে চাইছিল। কিন্তু ওই মেয়ের কারণে ওর স্বপ্ন ভাইঙ্গা গেল।’ হত্যার শিকার একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমন মিয়ার (১৭) মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর তার মা কল্পনা বেগম আহাজারি করে এসব কথা বলছিলেন।
সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে শেরপুর পৌরসভার বারাকপাড়া (নিমতলা) এলাকার বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সুমনের মায়ের আহাজারিতে স্বজন ও প্রতিবেশীদের চোখও পানিতে ভিজে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
কল্পনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় ওই মেয়ের সঙ্গে সুমনের পরিচয় হয়। এরপর দুইজনে একই কলেজে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গইড়া ওঠে। মেয়েটি সুমনকে বিয়ে করতে চাইছিল। কিন্তু আমি না করছিলাম। ছেলে আমার কথা শুনে নাই। ওই মেয়ে আমার ছেলেরে বিয়ার কথা বইলা বাড়ি থাইকা ডাইকা নেয়। এরপর আমার বাবা (সুমন) আর বাড়িতে আসে নাই। আইজ ও (সুমন) বাড়িতে ঠিকই আইলো, কিন্তু লাশ হইয়া।’
শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার একটি বাড়ির উঠান থেকে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় কলেজছাত্র সুমন মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
অপহরণের সাত দিন পর সোমবার (১১ নভেম্বর) দিনগত গভীর রাতে শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার একটি বাড়ির উঠান থেকে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা-পুলিশ।
নিহত সুমন কসবা বারাকপাড়া (নিমতলা) এলাকার রাজমিস্ত্রি মো. নজরুল ইসলামের ছেলে। সে শেরপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। ৪ নভেম্বর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে পৌরসভার বারাকপাড়া (নিমতলা) এলাকায় সুমনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। কয়েকজন সুমনের মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। এ হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের বিচার দাবি করছিলেন অনেকে।
আরও পড়ুন
এ সময় সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সাত দিন ধইরা বাবার (সুমন) লাইগা অপেক্ষা করতাছি। বাবা যে আর আসে না। বাবারে খুন কইরা ওরা আমার বুকটারে এক্কেবারে ঝাঁজরা কইরা দিছে। আমার বাবারে যারা খুন করছে, আল্লাহ তুমি ওগরে ফাঁসি দাও।’
সুমনকে নির্মমভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি স্বজন ও স্থানীয়দের। সুমনের খালা কল্পনা বলেন, ‘সুমনকে আমি আমার ছেলের মতো করে বড় করেছি। ওর কোনো আবদার আমি ফেলাইনি। আমরা অনেক বুঝাইছি, এই মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য। আজকে এই ডাইনিটা আমার সুমনরে হত্যা করল। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, পুরো ঘটনাটি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছে। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে সুমনের সর্বশেষ অবস্থান ময়মনসিংহে পাওয়া গিয়েছিল। প্রেমঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মূল তিনজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তদন্তে আরও কেউ জড়িত থাকার বিষয় উঠে এলে তাদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে।
নাইমুর রহমান/এফআরএস