অন্তর্বর্তী সরকার হেডমাস্টারের দায়িত্ব পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলওয়ে ময়দানে জাতীয় বিপ্লব সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের কথা বলে কিন্তু ডেড লাইন দেয় না। সেটা কেন? এটাতো রহস্যজনক। আপনারা সংস্কার করবেন কিন্তু সবাই মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী স্কুলের হেডমাস্টার? উনারা একটা সংস্কারের পাঠ দেবেন, সেটা করে একটা সিলেবাস তৈরি করবেন, তারপর রাজনৈতিক দলগুলোকে আগে শিক্ষাদান করবেন। এটা মনে হচ্ছে তাদের ইচ্ছা। তারা এখন স্কুলের হেডমাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন। 

তিনি আরও বলেন, যারা দেশ চালিয়েছে, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল, ১৫-১৬ বছর যাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে, গুমের শিকার হয়েছে, ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে, এত আত্মদানের পরও তাদের শেখাতে চান। বারবার ক্ষমতা পরিচালনার অভিজ্ঞতা হচ্ছে বিএনপির। আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে যারা আন্দোলনে ছিল। আপনারা মনে করছেন বিএনপিসহ তারা সবাই অশিক্ষিত। তাদেরকে আগে সংস্কার শিখাই, তারপর নির্বাচন হবে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন অ্যাডভাইজর বলছেন, খালি নির্বাচন নির্বাচন করলেই হবে? আমি অ্যাডভাইজরকে বলছি আপনি কি হেডমাস্টার? আমরা সব ছাত্র? আপনি আমাদের শিক্ষা দেবেন, আমরা শিখব। আমরা কি জানি না সংস্কার কী? আপনারা একটা প্রস্তাব দিতে পারেন, কিন্তু প্রস্তাব দিতে কতদিন সময় লাগে? সেই প্রস্তাব দেবেন নির্বাচিত সরকারের কাছে। এই জন্য নির্বাচন দিন। 

তিনি বলেন, যারা পার্লামেন্টে যাবে তারা মূর্খ নয়। যদি তাদের মূর্খ ভেবে থাকেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কত সময় লাগে নির্বাচন দিতে? এত সংকট কেন?  আমার মনে হয় গণআন্দোলনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না। বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করতে পারছেন না। তাই পতিত সরকারের লোককে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বসিয়েছেন। আপনারা বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখেছেন। তারাতো আপনাকে ব্যর্থ করবেই।    

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিনি স্বামীর বাড়িতে গেছেন। আমি বলতে চাই তিনি বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে কি নিয়ে গেছেন? আদানি বিদ্যুৎ তিনি নিয়ে গেছেন। বিদ্যুতের টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন। সিন্ডিকেটের টাকা স্বামীর বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এসব জনগণের টাকা, ভর্তুকির টাকা, শ্রমিকের টাকা। তিনি মেট্রোরেলের টাকা পাচার করেছেন। মেগা প্রজেক্টের টাকা পাচার করেছেন। ভাই বন্ধু সিন্ডিকেট দিয়ে বিদ্যুতের মিটার দেওয়ার জন্য টাকা লুট হয়েছে।  বর্তমানে সিন্ডিকেটের খেসারত দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আলুর কেজি কেন হবে ৭৫-৮০ টাকা। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না কেন। আপনি সিন্ডিকেটবাজদের কেন গ্রেপ্তার করতে পারছেন না। দুর্বলতা কোথায় এটা একটু জানতে চাই। এটাতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের কাম্য নয়। কেন এটা বাড়ছে, মানুষতো অনেক ধরনের প্রশ্ন করে।

জনসমাবেশ উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু। তিনি বলেন, এককভাবে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবে না। জাতীয় সরকার গঠন করবে। যারা হাসিনাবিরোধী ছিল সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার হবে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাখ্যা চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে জনসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রহীম, অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য শামীমা বরকত লাকী, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন প্রমুখ। 

এ সময় নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম মোমিত ফয়সাল, বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন আলম উপস্থিত ছিলেন। 

জনসমাবেশে আন্দোলন সংগ্রামে নিহত ও আহত নেতাকর্মীদের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।  

হাসিব আল আমিন/আরএআর