আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনে উত্তরবঙ্গের সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে তিন দফা দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। কর্মসূচি থেকে রংপুরের প্রবেশমুখ মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানান।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় একযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরীর শাপলা চত্বর, লালবাগ, পার্কের মোড় হয়ে মডার্ন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ, ডা. জামিল হোসেন, ইমতিয়াজ ইমতি, নাহিদ হাসান খন্দকার, মোতাওয়াক্কিল বিল্লাহ শাহ ফকির প্রমুখ। 

বক্তারা বলেন, আবু সাঈদ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে দেশে প্রথম জীবন দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গে প্রথম রক্ত ঝরেছে। অথচ উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গই বৈষম্যের শিকার। কোনো জেলা থেকে দশজনেরও বেশি উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হলেও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলা থেকে একজনকেও উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয়নি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে নতুন দেশ উপহার দিয়েছে। অথচ সেই দেশে এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে।

ছাত্রনেতারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আখতার হোসেনকে উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে সুষম উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়নে উত্তরবঙ্গের দুই বিভাগ থেকে কমপক্ষে দুইজন করে ৪ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করা, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমলা ও কর্মকর্তা নিয়োগে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা, পলিসি প্রণয়নে উত্তরবঙ্গের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ, বিতর্কিত ও জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে না এমন উপদেষ্টাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে না রাখা এবং প্রত্যেক উপদেষ্টাকে তাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে সাপ্তাহিকভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করার তিন দফা দাবি তুলে ধরেন।

আন্দোলনকারীরা সড়কে বসে প্রায় আধাঘণ্টা বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন। 

এর আগে গত রোববার নতুন করে আরও তিন উপদেষ্টার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়লেও সেই তালিকায় শূন্য রয়েছে উত্তরাঞ্চল। এ কারণে ফুঁসে উঠেছে এখানকার ছাত্র-জনতা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বৃহত্তর রংপুর বিভাগের কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করাকে ‘চরম বৈষম্য ও অবহেলা’ হিসেবে দেখছেন এই অঞ্চলের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে সমালোচনা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর